ইউটিউব-ফেসবুকের আয়ের টাকায় পিছিয়ে পড়া শিশুদের মুখে হাসি।
ইসরাত জাহান কনিকাঃ-
|
সময় নিউজ বিডিঃ ফ্রিল্যান্সকে অনেকেই এখন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তবে ব্যতিক্রম মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার ভবেরপাড়া গ্রামের সাইমন মল্লিক ও মাছুদা খাতুন দম্পতি। বিভিন্ন রেসিপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও তার নিজস্ব ইউটিউেব চ্যানেলে পোস্ট করে মাসে আয় করছেন লাখ টাকা। আর রান্না করা খাবারগুলো খাওয়াচ্ছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশুদের। শিশুদের পুষ্টি চাহিদা মেটাতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই দম্পতি। ২০১৩ সালে মুজিবনগর থেকে সাইমন মল্লিক যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানিতে রিমোট জব হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু চাকরির অনিশ্চয়তা থেকে ২০১৭ সালে এর পাশাপাশি মেহেরপুর শহরের হোটেল বাজার মোড়ে খোলেন গ্লোসিআইটি নামের একটি ফ্রিল্যান্সিং প্রতিষ্ঠান। সেখানে কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন ১২ জন যুবকের।
রান্না করা খাবারগুলো দিয়ে আহার করাচ্ছেন মুজিবনগর ভবেরপাড়া গ্রামের অসহায় শিশুদের। ফলে একদিকে যেমন বাড়তি আয়ের পথ তৈরি হয়েছে, অপরদিকে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করছেন সমাজে পিছিয়ে পড়া শিশুদের। প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় এ সময়ে ইন্টারনেট থেকে আয় করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেকেই। ইন্টারনেট থেকে আয়ের বর্তমানে নির্ভরশীল প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব। এখন অনেকেই ইউটিউব থেকে আয় করছেন পাশাপাশি জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন। বাংলাদেশে এখন ইউটিউব এবং ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোর জনপ্রিয়তা যেমন বাড়ছে, তেমনি অনেকের কাছে এগুলো অর্থ আয়ের জন্য একটি মাধ্যম হিসেবে গড়ে উঠছে। কোনো কোনো কনটেন্ট নির্মাতা ইউটিউব এবং ফেসবুক থেকে মাসে লাখ টাকারও বেশি উপার্জন করছেন। তাদেরই দুজন মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার ভবেরপাড়া গ্রামের সাইমন মল্লিক ও মাছুদা খাতুন দম্পতি। তিনি জানান, গ্রামে জন্ম এবং গ্রামেই বেড়ে উঠেছেন। তাই গ্রামের দৃশ্যকেই প্রাধান্য দিয়ে বিনোদন হিসেবে ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজ খুলেছেন। শুরুতেই তেমন ভিউয়ার না থাকলেও বর্তমানে সন্তোষজনক ভিউয়ার রয়েছে। একদিন পরপর বিভিন্ন রেসিপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে দেয়া হয় বলে জানালেন সাইমন মল্লিকের স্ত্রী মাসুদা খাতুন। তিনি জানান, চিকেন ফ্রায়েড রাইস, খিচুড়ি বিরানি, ধুপি পিঠা, ভাপা পিঠা, পাটিসাপটা,খেজুরের রসের পিঠা, পাকান পিঠা, রোস্ট, চিকেন ফ্রাই, আমড়া দিয়ে ছোট মাছ রান্না, ওল দিয়ে খাসির মাংস রান্না, মানকচু ফ্রাই, জলপাইয়ের আচার, ডাটা ইলিশ, ইলিশ মাছের দো-পেঁয়াজো, ভাপা ইলিশ, ইলিশ ভর্তা, ডিম ফ্রায়েড রাইস, ইলিশ পোলাও, তালের বড়া, তালের খির, তালের পিঠা, তালের খির, রাজহাঁসের মাংস, রুটি, চিনিহাঁসের মাংস, খিচুড়ি, খাসির মাংসের তেহারি, ছোট মাছের টিকায়া, ইলিশ মাছ কচু, ডালের বড়া, ভাপা পুলি, হাসের মাংসের বিরায়ানি, গাজরের হালুয়া, শুঁটকি মাছের ভুনা, শুঁটকি মাছের ভর্তা, মিষ্টি কুমড়া দিয়ে ইলিশসহ বিভিন্ন আইটেমের রান্না করা খাবার সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশুদের খাওয়াচ্ছেন। তিনি বলেন, পুষ্টি চাহিদা মেটাতেই রান্না করা খাবার দিয়ে পিছিয়ে পড়া শিশুদের আহারের ব্যবস্থা করেছেন। মাসুদা খাতুনের মা শিরিনা আক্তার জানান, ছেলের এই কাজে সহযোগিতা করতে পেরে তিনি আনন্দিত। কারণ তিনি আগে থেকে রান্নার কাজ করতে পারতেন। দাদি, নানিদের কাছ থেকে শিখেছেন। এখন এই রান্না আধুনিক মেয়েদের শেখাতে পারলেই তার স্বার্থকতা। শেষ বয়সে এমন কাজ করতে পেরে খুশি তিনি। শিরিনা আক্তার জানালেন, একদিন পরপর ডেকে এনে শিশুদের এসব খাবার খাওয়ানো হয়। এসব খাবার খেয়ে তারা অনেক খুশি। এটা তাদের অনেক মানসিক তৃপ্তি দেয়। |