বাস্তবে কত? ৯ কোটি টাকা ব্যয়
|
![]() সময় নিউজ বিডিঃ ভোটের প্রচারে একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ কত টাকা খরচ করতে পারবেন, তা নির্বাচনী আইনে নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। আবার প্রার্থীকেও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাব দিতে হয়। বাস্তবে নির্ধারিত সীমার বাইরে অনেক বেশি টাকা খরচ করেন প্রার্থীরা। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ভোট টানতে প্রার্থীরাই একে অপরের বিরুদ্ধে কোটি টাকা ছাড়ানোর অভিযোগ করেছেন। ‘চাঁদরাতে’ (ভোট গ্রহণের আগের রাত) এই টাকার অঙ্ক কয়েক গুণ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ৭ জন এবং ২২৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ২০৪ জন সব মিলিয়ে ৯ কোটি ৮ লাখ টাকার সম্ভাব্য নির্বাচনী ব্যয় বিবরণী জমা দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী, ভোটারের সংখ্যার ভিত্তিতে নির্বাচনী ব্যয়সীমা নির্ধারণ করা হয়। ১০ লাখ ১ ভোটার থেকে ২০ লাখ ভোটার থাকলে মেয়র প্রার্থীর সর্বোচ্চ নির্বাচনী ব্যয় হবে ৩০ লাখ টাকা। এর বাইরে মেয়র প্রার্থীর ব্যক্তিগত খরচ সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা হতে পারবে। একইভাবে কাউন্সিলর পদের জন্যও ভোটার অনুপাতে সর্বোচ্চ ব্যয়ের সীমা (৫০ হাজারের বেশি হলে) ৬ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের দেওয়া নির্বাচনী ব্যয়ের এই হিসাবকে ‘মিথ্যার বেসাতি’ বলে উল্লেখ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আকতার কবির চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী খরচ তদারকিতে ঘাটতি রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। আমাদের ধারণা অনুযায়ী, এবার নির্বাচনী ব্যয়ের পরিমাণ ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকার কম হবে না।’ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে ২৭ জানুয়ারি। প্রচার শুরু হয় ৮ জানুয়ারি। শেষ হয়েছে ২৫ জানুয়ারি। ভোটারসংখ্যা ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬। যদিও ভোট হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ২৯ মার্চ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ভোট স্থগিত হয়ে যায়। তখন ১৩ দিন (গত বছরের ৯ থেকে ২১ মার্চ) নির্বাচনী প্রচারণা চালান প্রার্থীরা। দুই দফা ভোটের প্রচারণার কারণে এবার খরচ অনেক বেড়েছে বলে প্রার্থীরাই বলছেন। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, নির্বাচনী ব্যয়ের সীমার চেয়ে বেশি বা কালোটাকা ব্যবহারের এখনো কোনো অভিযোগ কমিশনে আসেনি। নির্বাচনের পর প্রার্থীরা রিটার্ন দাখিল করলে ভাউচারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। এরপরও কেউ অতিরিক্ত টাকা খরচ করছেন কি না, তা তদারকি হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি মেয়র পদে দুই প্রার্থীর ‘অনিয়ন্ত্রিত’ ব্যয় নির্বাচনী খরচের দৃশ্যমান খাত হলো পোস্টার। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে রেজাউল করিম চৌধুরী ২০ হাজার এবং শাহাদাত হোসেন ৪১ হাজার পোস্টার ছাপানোর বিষয়টি হিসাব ব্যয় বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন। অথচ শহরের ১৪, ২৯ ও ৩৪—এই তিনটি ওয়ার্ডের প্রতিটিতেই গড়ে তিন-চার হাজার পোস্টার লাগিয়েছেন দুই প্রার্থী। দুই প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারের সঙ্গে যুক্ত থাকা নেতারা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেছেন, পুরো শহরে প্রতিজনের পোস্টারের সংখ্যাই ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। প্রতি হাজার পোস্টার ছাপাতে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা খরচ হয়। ১ হাজার পোস্টার লাগাতে খরচ পড়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। একটি ব্যানার ছাপানো এবং তা লাগানোর খরচ প্রায় ৬০০ টাকা। রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রচারণায় ৩০টি মাইক ব্যবহৃত হচ্ছে। যানবাহনসহ প্রতিদিন এই খাতে কমবেশি ৪০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ তিনি এই খাতে ২ লাখ টাকা খরচ দেখিয়েছেন। আর শাহাদাত হোসেন মাইকিংয়ের পেছনে খরচ দেখিয়েছেন ১৫ হাজার টাকা। অথচ তাঁর প্রচারণায় ১০ থেকে ১৫টি মাইক ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতে কম করে হলেও দিনে ১৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। তবে বিএনপি প্রার্থী শাহাদাত হোসেন ঘোষণার অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে না দাবি করে বলেন, ‘যেভাবে ঘোষণা দিয়েছেন, তার চেয়ে ব্যয় বেশি হবে না। তবে তাঁর (রেজাউল করিম চৌধুরী) পোস্টার ব্যয়ও কোটি টাকার কম হবে না। অবাধে টাকা খরচের বিষয়টি নগরবাসী দেখছে। নির্বাচন কমিশনকে বলব বিষয়টি খতিয়ে দেখুক।’ এ অভিযোগ অস্বীকার করে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘ঘোষণার বাইরে বাড়তি কোনো টাকা খরচ করছি না। আমার প্রচারণায় কোনো জৌলুশ নেই। প্রচারপত্র ও পোস্টারে যে ব্যয় হচ্ছে, তা সীমার মধ্যে রয়েছে। বিএনপি প্রার্থী যে অভিযোগ দিয়েছে, তা ভিত্তিহীন।’ |