পল্লবীতে হত্যার নেপথ্যে লক্ষ্মীপুরের সাবেক এমপি আউয়াল
এস এম আওলাদ হোসেন, সিনিয়র রিপোর্টারঃ
|
সময় নিউজ বিডিঃ রাজধানীর পল্লবীতে প্রকাশ্যে সাহিনুদ্দিনকে (৩৩) কুপিয়ে হত্যার নেপথ্যে রয়েছেন লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান, তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়াল। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সাহিনুদ্দিনকে বাসা থেকে ডেকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন নিহতের মা আকলিমা বেগম। বাদী হয়ে পল্লবী থানায় আউয়ালসহ ২০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন তিনি। র্যাব, থানা পুলিশ ও ডিবি আসামিদের গ্রেফতারে একযোগে মাঠে নেমেছে। মামলাটি ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে আকলিমা বেগম উল্লেখ করেছেন, গত ১৬ মে বিকাল ৪টায় সুমন ও টিটু নামে দুই যুবক সাহিনুদ্দিনকে জমির বিরোধ মেটানো হবে উল্লেখ করে ফোন দিয়ে ডেকে নেন। সাহিনুদ্দিন মোটরসাইকেলে পল্লবীর ডি-ব্লকের ৩১ নম্বর সড়কের ৪০ নম্বর বাসার সামনে পৌঁছালে সুমন ও টিটুসহ ১৪/১৫ জন মিলে তাকে টেনে হিঁচড়ে ওই বাড়ির গ্যারেজে নিয়ে যায়। এসময় সাহিনুদ্দিন ছয় বছরের ছেলে মাশরাফি গেটের বাইরে ছিল। গ্যারেজে ঢুকিয়ে তাকে সন্ত্রাসীরা চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল, রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এরপর তাকে ওই বাড়ি থেকে বের করে ৩৬ নম্বর বাড়ির সামনে বসে ফের কুপিয়ে সেখানে ফেলে রেখে চলে যায়।
ছেলের সামনেই পল্লবীর স্থানীয় সন্ত্রাসী সুমনের নেতৃত্বে নৃশংসভাবে খুন হন সাহিনুদ্দিন। আকলিমা বেগমের অভিযোগ, পল্লবীর সেকশন-১২ বুড়িরটেকস্থ আলীনগর আবাসিক এলাকার হ্যাভেলি প্রোপার্টিজ ডেভেলপার লিমিটেডের এমডি এবং লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক সাংসদ (এমপি) এমএ আউয়ালের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভাড়া করা স্থানীয় সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করেছে। আনুমানিক ৫ কোটি টাকা মূল্যের ১০ একর জমি জবরদখলে বাধা দেওয়ায় খুন হতে হয় তাকে।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক এমপি লায়ন এমএ আউয়ালকে। অন্যদের মধ্যে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুমন, মো. আবু তাহের, মুরাদ, মানিক, মনির, শফিক, টিটু, কামরুল, কিবরিয়া, দিপু, আবদুর রাজ্জাক, মরন আলী, লিটন, আবুল, বাইট্যা বাবু, বড় শফিক, কালু ওরফে কালা বাবু, নাটা সুমন ও ইয়াবা বাবুকে। আসামিরা সবাই পল্লবী থানা এলাকার বাসিন্দা। এজাহারভুক্ত এ ২০ জন ছাড়াও অচেনা আরও ১৫ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে আকলিমা বেগম উল্লেখ করেন, পল্লবীর সেকশন-১২ আলীনগর বুড়িরটেক এলাকায় সপরিবারে বসবাস করেন তিনি। আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে পল্লবীর উত্তর কালশীর বুড়িরটেকস্থ আলীনগর এলাকায় তাদের প্রায় ১০ একর জমি জবরদখলের পাঁয়তারা করছে। এ বিষয়ে আকলিমার স্বামী জৈনুদ্দিন বাদী হয়ে ঢাকার ১ম সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা (ঢাকা দেওয়ানি মামলা নং-১১৮/১৫) করেন। পরবর্তী সময় আসামিরা তার ছেলে মো. সাহিনুদ্দিন ও মো. মাইনুদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশে মারধর করার বিষয়ে গত বছরের ২৬ নভেম্বর আকলিমা বেগম বাদী হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় আরও একটি মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেফতার হলেও সুমন জামিনে মুক্তি পেয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
আউয়াল ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে পল্লবীতে আরও জমি দখল, হুমকি, হত্যা চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। গত ৭ মে পল্লবী থানায় সাবেক একজন সেনা কর্মকর্তা তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেছেন। এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের পরপর আসামিরা গা ঢাকা দিয়েছে। তবে পল্লবী থানা পুলিশ দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে। তারা হলো দিপু ও মুরাদ। যারা পুলিশ রিমান্ডে রয়েছে।
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ বলেন, ‘আমরা দুজনকে গ্রেফতার করেছি। তারা রিমান্ডে রয়েছে। মামলা বুধবার (১৯ মে) বিকালে ডিবিতে হস্তান্তরের নির্দেশ হয়েছে। আমরা মামলা ডিবিতে হস্তান্তর করে দিচ্ছি।’
|