লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীরহাট ফেরীঘাট ইজারা নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধ
এস এম আওলাদ হোসেন, সিনিয়র রিপোর্টারঃ
|
লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল নৌ- রুটের লক্ষ্মীপুর অংশে মজুচৌধুরীর হাট লঞ্চ ও ফেরীঘাটের মালিকানা ও ইজারা নিয়ে চরম বিরোধ দেখা দিয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে সদ্য ইজারা প্রাপ্ত দু’পক্ষের ইজারাদারের মধ্যে এ বিরোধ দেখা দেয়। এতে মজু চৌধুরীরহাট ঘাট দখল ও ইজারা আদায়কে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
বুধবার (৩০ জুন) দুপুরে ওই ঘাটের ইজারাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষ লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ কার্যালয় প্রাঙ্গণে হট্টগোল করতে দেখা গেছে।
এদিকে মজু চৌধুরীরহাট ঘাটের পূর্ববর্তী ইজারাদারের মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হওয়ায় নতুন করে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের জন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে ৯০ লক্ষ টাকায় লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বাঞ্চানগর গ্রামের ইসমাইল হোসেন পাঠানকে ঘাটের ইজারা দেয় লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ। এর আলোকে বুধবার (৩০জুন) বিকেলে মজু চৌধুরীরহাট ঘাটের ইজারা আদায়ের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন জেলা পরিষদ।
এদিকে ২০১৭ সালে মজুচৌধুরীরহাট ঘাটটি নৌ-বন্দর হিসেবে গেজেটভূক্ত হওয়ায় নিয়মানুযায়ী ঘাটের দায়িত্ব চলে যাওয়ার কথা বিআইডব্লিউটিএর কর্তৃপক্ষের হাতে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে বিগত বছরগুলোতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে ঘাটের ইজারা দিয়ে আসছিলো লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ। কিন্তু বর্তমানে নদী বন্দরের আওতাধীন মজুচৌধুরীর হাট লঞ্চঘাট, ফেরীঘাট, পার্কিং ইয়াড ও শুল্ক আদায়ের দায়িত্ব বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ বুঝে নিয়ে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে জন্য ইজারা মূল্য ও আয়কর ও ভ্যাট বাবদ ৫৪ লক্ষ টাকায় লক্ষ্মীপুর সদরের চন্দ্রগঞ্জ এলাকার শিমুল চক্রবর্তীকে ঘাটটির ইজারা দেয় বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।
এনিয়ে উভয় কর্তৃপক্ষের ইজারাদারদের মধ্যে প্রকাশ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এতে যে কোন সময় ঘাট এলাকায় রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ইজারাদার পক্ষে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম ভুলু বলেন, ফেরীঘাটসহ মজু চৌধুরীর হাটটি নৌ-বন্দরের সীমানা হিসেবে ২০১৭ সালে গ্রেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে যায়। আমরা আগামী ১ বছরের জন্য বিআইডব্লিউটিএ থেকে মজু চৌধুরীরহাট ঘাটটি ইজারা নিয়েছি। পূর্বের ইজারাদারের মেয়াদ বুধবার (৩০জুন) শেষ হচ্ছে। আমরা ১লা জুলাই ঘাটের দায়িত্ব বুঝে নেবো। তবে জেলা পরিষদ নতুন করে অন্য কাউকে ইজারা দেওয়া আইন সম্মত হয়নি।
এদিকে জেলা পরিষদ থেকে ইজারাপ্রাপ্ত ইসমাইল হোসেন পাঠান জানান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের মাধ্যমে মজু চৌধুরীর হাট ঘাটটি ৯০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে আমাকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। বিকেলে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ঘাটটি আমাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান জানান, লক্ষ্মীপুর ও ভোলা জেলা পরিষদের মালিকানাধীন মজু চৌধুরীরহাট হতে ইলিশা জংশন আন্ত:বিভাগীয় ফেরীঘাটের অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় পূর্ব থেকে এ ঘাটের ইজারা চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারে মাধ্যমে হয়ে আসছে। সেই আলোকে বর্তমান ইজারাদরের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন করে ইজারাধার নিযুক্ত করা হয়েছে। সে আলোকে ইজারাপ্রাপ্ত ইসমাইল হোসেন পাঠানকে ঘাটটির দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বিভাগীয় কমিশনার ও আন্ত:মন্ত্রণালয়ের নতুন কোন নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক এ.কে.এম কায়সারুল ইসলাম জানান, মজু চৌধুরীরহাট ঘাটটি নৌ-বন্দর হিসেবে গেজেটভূক্ত হওয়ার পর থেকে এ ঘাটের সকল দায়-দায়িত্ব বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের। সে অনুযায়ী ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের জন্য ঘাটটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। আগামী কাল ১লা জুলাই স্থানীয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে ইজারাদারকে ঘাটটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তবে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষ থেকে কিভাবে ঘাটটি ইজারা দেয়া হয়েছে এবিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ’র এই কর্মকর্তা।
|