রূপগঞ্জে নিহতদের ক্ষতিপূরণ ও দায়ীদের শাস্তি চান শ্রমিক নেতারা
স্টাফ রিপোর্টার
|
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডসের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ। তারা অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের আজীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। শনিবার (১০ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের কেন্দ্রীয় কমিটি আয়োজিত সমাবেশে তারা এ দাবি জানান। বক্তারা বলেন, কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধ ৫২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং এখনও অনেকে নিখোঁজ ও আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। ঘটনার তিন দিন হয়ে যাচ্ছে অথচ এখনও উদ্ধার কাজ শেষ হয়নি। উদ্ধার কাজের এই দীর্ঘসূত্রিতায় অনেকের মরদেহ গুম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে তারা বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় প্রায় ২০০ জন শ্রমিক কর্মরত ছিলেন, কিন্তু এখনও অনেকেরই খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, সরকার কথায় কথায় উন্নয়নের সাফাই গাইলেও অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তি, পর্যাপ্ত লোকবল ও যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা না করায় প্রায় ২৪ ঘণ্টার মতো আগুন জ্বলছিল। একের পর এক অগ্নিকাণ্ড, ভবন ধসের ঘটনায় অকাতরে হাজার হাজার শ্রমিকের তাজা প্রাণ ঝরে গেলেও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হয়নি। ‘গত ৯ বছরে তাজরিন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ড, স্পেকট্রাম কারখানায় ধস, রানা প্লাজায় ধস, স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের কারখানায় আগুন, হামীম গ্রুপের কারখানায় আগুন, পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানায় নিহত ও আহত শ্রমিকরা যথাযথ ক্ষতিপূরণ পায়নি। শুধুমাত্র ২০২০ সালেই কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ও নির্যাতনে এক হাজার ৪৫ জন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।’ ‘এমনকি এর দায়ে কোনো বিচার পর্যন্ত হয়নি, যার কারণে মালিকদের বেপরোয়া শোষণের বলি হতে হচ্ছে শ্রমিকদের। অথচ প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের পর তদন্ত কমিটি গঠন এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা রকম আলোচনা হলেও কিছুদিন পরই তা থেমে যায় এবং বাধ্য হয়ে শ্রমিকদের অনিরাপদ পরিবেশেই জীবিকার তাগিদে জীবনকে তুচ্ছ করে কাজ করতে হয়।’ নেতৃবৃন্দ এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়ে বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে- কারখানা থেকে বের হওয়ার গেট তালাবন্ধ রাখা, অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা না থাকা এবং শ্রমআইন লঙ্ঘন করে শোষণের মানসিকতায় ব্যাপক শিশু-কিশোর শ্রমিক নিয়োগের কারণে এতো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও এতো বড় একটি কারখানায় বের হওয়ার জন্য মাত্র দুটি সিড়ি- এটা ভবন নির্মাণের নানা রকম ত্রুটির বিষয়ও সামনে নিয়ে আসছে। রাজধানীর অদূরে এতো সব অনিয়ম নিয়ে এতো বছর কি করে এই কারখানা চললো? সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয় ও কারখানা পরিদর্শন কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস, ভবন নির্মাণের অনুমোদনের জন্য সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা কোথায় ছিল, কি করেছেন উনারা? তাই এই অগ্নিকাণ্ড কোনোভাবেই নিছক কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটা হত্যাকাণ্ড। এ রকম হত্যাকাণ্ডের জন্য মালিকদের পাশাপাশি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারে না। দেশে এ রকম ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা বা অনুমোদনহীন কারখানার সংখ্যা কত জানতে চেয়ে বক্তারা বলেন, আর কত শ্রমিক আগুনে পুড়ে মরলে মালিকদের স্বার্থরক্ষাকারী সরকারের বোধোদয় ঘটবে? সমাবেশ থেকে নেতারা করোনা সংক্রমণের উচ্চহারের কারণে চলমান লকডাউনের সময়ে জীবিকার তাগিদে কাজে যোগ দেয়া শ্রমিকদের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক এবং নিহত ও আহতদের পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে মর্মান্তিকভাবে মারা যাওয়া সকল শ্রমিকদের আইএলও কনভেনশন-১২১ অনুযায়ী একজীবনের আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ, আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন, নিখোঁজ শ্রমিকদের অবিলম্বে উদ্ধার এবং তার সংখ্যা প্রকাশ, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দায়ী সকল পক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, অনুমোদনহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ সকল কারখানা বন্ধ করে দেয়া এবং সকল শ্রমিকের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার এবং অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তারা। সহ-সভাপতি খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের যুগ্ম-সম্পাদক প্রকাশ দত্ত। এছাড়াও সমাবেশে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হোটেল-রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশননের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ সিএনজি অটোরিকশাচালক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হানিফ শেখ, ঢাকা পোশাক প্রস্তুতকারক শ্রমিক সংঘের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম মানিক, বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আখতারুজ্জামান খান, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সদস্য আতিকুল ইসলাম টিটোসহ প্রমুখ। |