দেশে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের ৯২ শতাংশ নমুনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত মাত্রার চেয়ে বেশি ট্রান্সফ্যাট পাওয়া গেছে
|
সময় নিউজ বিডিঃ দেশে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের ৯২ শতাংশ নমুনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত মাত্রার চেয়ে বেশি ট্রান্সফ্যাট পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর হৃদরোগজনিত মৃত্যুর ৪ দশমিক ৪১ শতাংশের জন্য দায়ী এ ট্রান্সফ্যাট। ২০২৩ সালের মধ্যে ট্রান্সফ্যাট নীতিমালা বাস্তবায়নে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি নির্দেশনা রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে এ সংক্রান্ত নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশেও এ বিষয়ে একটি নীতিমামলার খসড়া প্রণয়ণ করা হয়েছে। তবে সেটি চূড়ান্ত আকারে প্রকাশ ও বাস্তবায়নে আরও সময়ের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ট্রান্স ফ্যাটি এসিড (টিএফএ) বা ট্রান্সফ্যাট এক ধরনের ক্ষতিকর ফ্যাট বা স্নেহ জাতীয় খাদ্য উপাদান। শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাটের প্রধান উৎস পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল বা পিএইচও।
যা বাংলাদেশে ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামে পরিচিত। পিএইচও বা ডালডা সাধারণত ভাজা পোড়া, স্নযাক্স ও বেকারিপণ্য তৈরিসহ হোটেল-রেস্তোরাঁ ও সড়কসংলগ্ন দোকানের খাবার বা স্ট্রিট-ফুড তৈরিতে ব্যবহার হয়। উচ্চমাত্রায় ট্রান্সফ্যাট গ্রহণ হার্ট অ্যাটাকসহ হৃদরোগজনিত মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর হৃদরোগজনিত মৃত্যুর ৪ দশমিক ৪১ শতাংশের জন্য দায়ী ট্রান্সফ্যাট। তবে এ বিষয়ে কোনো নীতিমালা না থাকায় হুমকিতে রয়েছে দেশের জনস্বাস্থ্য।
জানা গেছে, সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ট্রান্সফ্যাট নির্মূল করার বৈশ্বিক আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ নির্ধারণ করে নীতিমালা ঘোষণা করেছে। ৫ ফেব্র“য়ারি ভারতের নিরাপদ খাদ্য ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (এফএসএসএআই) তাদের নিরাপদ খাদ্য ও মান (বিক্রয়ের নিষেধাজ্ঞা ও বাধ্যবাধকতা) বিষয়ক প্রবিধানমালা সংশোধন করে। সেখানে তেল ও চর্বি দিয়ে তৈরি সব খাদ্যপণ্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ ধার্য করেছে। এর মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই এফএসএসএআই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী সব তেল ও চর্বিতে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ নির্ধারণ করে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে। সংশোধিত প্রবিধানমালাটি সব পরিশোধিত ভোজ্য তেল, বনস্পতি ঘি (পিএইচও), মারজারিন, বেকারি শরটেনিং ও ভেজিটেবল ফ্যাট স্প্রেড এবং মিল্ক ফ্যাট স্প্রেডসহ অন্যান্য রান্নার উপকরণ এবং এসব দিয়ে তৈরি সব খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) দক্ষিণ এশিয়া প্রোগ্রামের রিজিওনাল ডিরেকটর বন্দনা শাহ্? বলেন, ট্রান্সফ্যাটের বিষয়ে বৈশ্বিক সর্বোত্তম নীতি ভারত গ্রহণ করেছে। দেশটি তেল, চর্বি (ফ্যাট) এবং খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণ ২ শতাংশের নিচে সীমিত করার নীতি গ্রহণ করেছে। যা এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোকেও অতি দ্রুত একই ধরনের নীতি গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করবে। বাংলাদেশের খাদ্য সরবরাহ থেকেও এ ক্ষতিকর উপাদানটি নির্মূল করতে হবে। তাহলে দেশটিতে নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য ব্যবস্থা তৈরির সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে হৃদরোগ হ্রাস করার মাধ্যমে মূল্যবান জীবন এবং বিপুল অর্থের সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
গত বছর এক গবেষণায় ঢাকার শীর্ষস্থানীয় পিএইচও ব্র্যান্ডগুলোর ২৪টি নমুনার একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। এতে দেখা গেছে, ৯২ শতাংশ নমুনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত মাত্রার চেয়ে ২ শতাংশের বেশি ট্রান্সফ্যাট পাওয়া গেছে। এ গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, যত তাড়াতাড়ি এটি বাস্তবায়ন হবে দেশের জন্য ততই মঙ্গল। বিশেষ করে দেশে হৃদরোগ কমিয়ে আনতে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের মধ্যে ট্রান্সফ্যাট নীতিমালা বাস্তবায়নে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি নির্দেশনা রয়েছে। এর আগেই এটি করতে হবে। কারণ নীতিমালা বাস্তবায়ন না হলে দেশের কোনো ‘প্রসেস ফুড’ বা ‘প্রক্রিয়াজাত খাদ্য’ বিদেশে রফতানি করা যাবে না। তিনি বলেন, নীতিমালা প্রণয়নের পর বিএসটিআই (বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট) খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের মান পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। অধ্যাপক সোহেল রেজা বলেন, কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছায় দেশে এটি দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব।
খাদ্যের এ ক্ষতিকর উপাদান নির্মূলের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে নীতি প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। খসড়া নীতি তৈরির কাজ চলছে। নীতি প্রণয়নের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকার বলেন, আমরা ইতোমধ্যে একটি খসড়া প্রণয়ন করেছি। এখন সর্বস্তরের মতামতের জন্য এটি ওয়েবসাইটে দেয়া হবে। নিয়মানুযায়ী কমপক্ষে দেড় মাস এটি ওয়েবসাইটে রাখা হবে। এই সময়ে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। তারপর সেটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে পাঠানো হবে। আইনের খুটিনাটি বিষয়গুলো তারা ঠিক করবেন। সব ঠিক থাকলে আগামী ৬ মাসের মধ্যে এ নীতিমালা চূড়ান্ত করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন মো. আব্দুল কাইউম সরকার। |