সময় নিউজ বিডিঃ নতুন বউয়ের হাতে লাগানো মেহেদীর রঙ এখনো শুকায়নি। বউকে নিয়ে ঢাকায় পৌঁছানোর আগেই এক্সিডেন্ট করে কবরের মাটিতে চিরতরে ঘুমিয়ে গেছে শামিম। রোড এক্সিডেন্টে স্বামীকে হারানো উনার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী মিম মারাত্মক আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে হসপিটালের বেডে শুয়ে।
বউভাতের অনুষ্ঠানে জ্বালানোর জন্য আনা বেঁচে যাওয়া কাঠের টুকরা গুলি এখনো পরে আছে বাড়ির পাশেই।অথচ যাদের জন্য ছিলো এত আয়োজন। দু দিনের ব্যবধানে পৃথিবী ছেড়েই চলে গেলো তাদেরই একজন। অপরজন এখনো কাতরাচ্ছে অসহ্য যন্ত্রনায়। কত এক্সিডেন্ট এর খবরই তো পাই। তাদের সবাই অচেনা। তাই কষ্ট লাগলেও সেসব ঘটনা অন্তত হৃদয় টা ছিন্নভিন্ন করে না। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন এই দূর্ঘটনার খবর শুনলাম। বুক কেঁপে উঠে সাথে সাথেই। স্পট ডেটে মারা যাওয়া মানুষটা যে আমার নানা বাড়ি থেকে ৩ মিনিটের দূরত্বের এক বাড়ির সন্তান।
যিনি আমার এলাকা সম্পর্কের মামা হোন। ছোট থেকেই চট্টগ্রামে থাকার সুবাদে দাদাবাড়ি, নানাবাড়িতে খুব বেশী আসার সুযোগ হয় না বলে উনার সাথে গভীর সম্পর্ক ছিলো না যদিও,তবে বার কয়েক দেখা হয়েছিলো বেঁচে থাকতে।কথা হয়েছিলো অল্পবিস্তর। সদা হাসিমুখে থাকা মানুষটার হঠাৎ মৃত্যুর খবর কেড়ে নিয়েছিলো আমার মুখের হাসি।কারণ! দু দিন আগেই যে উনার বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে।
এমন মৃত্যু বড্ড বেশীই যন্ত্রনার। রাত ৮ টায় যখন উনার বাড়িতে গিয়ে পৌঁছালাম। তখন কেবলই লাশবাহী এম্বুল্যান্স সাইরেন বাজিয়ে ছুটে আসছিলো। অপেক্ষমান মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলো দু দিন আগেই বর সেজে বিয়ের পিড়িতে বসা ছেলেটার লাশ হয়ে ফিরে আসার দৃশ্য দেখতে। সেই দৃশ্য এতটাই করুণ।
খুব কাছ থেকে দেখছিলাম বলে আমার চোখের জল গড়িয়ে পড়ছিলো অজান্তেই। একজন মা তার সন্তানকে জীবনের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে বড় করে তোলেন। সেই মায়ের কাছে সন্তানের মৃতদেহ দেখার চেয়ে ভয়ংকর কিছু হয় না। অথচ এমন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখিই হতে হলো মৃত শামিমের মা”কে। এ্যাম্বুল্যান্স থেকে শামিমের রক্তাক্ত দেহ নামিয়ে যখন খাটিয়াতে করে মায়ের কাছে নেয়া হলো!
হাসিমুখে নতুন বউকে সাথে করে মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকার পথে রওনা দেয়া সেই সন্তানকে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে দেখে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে দেয় মা।পাগলের মত সন্তানের মুখে চুমু খেতে খেতে বলছিলেন, ও ময়না পাখি, ও আমার কলিজার টুকরা।
সংবাদটি পঠিত হয়েছেঃ ৮