কলাপাড়ায় শয়তানের নি:শ্বাসে সর্বস্ব খোয়ালেন বৃদ্ধা নারী।
মোয়াজ্জেম হোসেন কলাপাড়া।
|
কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি।। পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের মাছ বাজারে মাংস ক্রয় করতে এসেছিলেন ফাতেমা বেগম (৬৫) নামের এক বৃদ্ধা নারী। এসময় দেখা হয় তিন যুবকের সঙ্গে। ওই যুবকরা ফাতেমাকে জানান যে, তারা তাদের পুরনো চেনাজানা। পরে ওই নারীকে তাদের সঙ্গে আসতে বলেন।
ওই নারীও আপন মনে তাদের সঙ্গে লঞ্চঘাট এলাকায় আসেন। পরে ওই বৃদ্ধা নারী তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এসময় ওই নারীর কাছ থেকে অভিনব কায়দায় হাতিয়ে নেয়া হয় দেড় ভরি ওজনের গলার চেন এবং আধা ভরি ওজনের কানের দুল। বৃহস্পতিবার সকাল দশটার এ ঘটনার একটি ভিডিও ধরা পরে ওই এলাকার মাহবুব আলম নামের এক ব্যবসায়ীর বাড়ির সিসি ক্যামেরায়।
সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়, সকাল ১০টা ২০ মিনিটে তিন যুবক ওই বৃদ্ধা নারীকে মাছ বাজার থেকে লঞ্চঘাট সংলগ্ন মাহবুবের ঘরের সামনে নিয়ে যায়। এসময় তাদের এক জনের মুখে মাক্স ছিলো। তারা ওই নারীর হাতে একটি ব্যাগ ধরিয়ে। ওই ব্যাগে হুইল পাউডারের একটি প্যাকেট ছিলো। আর ওই নারী ব্যাগ নিয়ে তার গলায় দেড় ভড়ি ওজনের চেইন ও আধা ভরি ওজনের দুই কানের দুল খুলে দেূ তাদের হাতে। এরপরই ওই তিন যুবক ওখান থেকে সটকে পরেন। এসময় ওই নারীকে ওই যুবকদের পিছনে যেতে দেখা যায়। অনেক খোজাখুজির পর বেলা বারোটার দিকে তার পরিবারের লোকজন পৌর শহরের বাসস্ট্যান এলাকায় ওই নারীকে খুজে পান। এসময় ওই নারী কিছুই বলতে পারেনি। সে অনেকটা অচেতন ছিলো। পরে এ ঘটনায় ওই নারী অজ্ঞাত তিনজনের নামে কলাপাড়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। স্থানীয়দের ধারনা, ওই যুবকরা শয়তানের নি:শ্বাস (স্কোপোলামিন ড্রাগ) ব্যবহার করে ওই নারীর সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়েছে। এর আগেও শয়তানের নি:শ্বাস ব্যবহার করে এই উপজেলার বেশ কয়েকজনের সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র।
একটি সূত্রে জানা যায়, একটি ভয়ংকর ড্রাগের নাম হচ্ছে স্কোপোলামিন বা শয়তানের নি:শ্বাস। এর বৈজ্ঞানিক নাম হায়োসিসিন। বোরাচেরু নামে ফুলের বীজ থেকে এই ড্রাগ তৈরী হয়। এর গাছকে বলা হয় টেবিল প্লান্ট বা শয়তানের গাছ। এই শয়তানের গাছ বা স্কোপোলামিনের আদি জন্ম কলম্বিয়া। কলম্বিয়ার সন্ত্রাসীরা এটি ব্যবহার করে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশের অপরাধীরাও এটি ব্যবহার করছে। এ ড্রাগ ব্যবহারে সন্ত্রাসীরা একজন মানুষকে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয়। মানে এটি প্রয়োগের পর আক্রান্ত ব্যক্তিকে যা বলা হয় সে তাই করে।
কলাপাড়া পৌর শহরের ২ নং ওয়ার্ডের মহিলা কলেজ রোড এলাকার মৃত মান্নান হাওলারের স্ত্রী ভ‚ক্তভোগী বৃদ্ধা ফাতেমা বেগম জানান, তিনি কলাপাড়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসে মাঠ কর্মী হিসেবে চাকুরী করতেন। বেশ কয়েক বছর আগে তিনি পেনশনে যান। অনেক কষ্টে নিজের উপার্জিত অর্থে তিনি সোনর চেইন ও কানের দুল তৈরী করেছিলেন। সকাল দশটায় তিনি বাসা থেকে বাজারে মাংস কিনতে যান। এসময় তিন যুবক তাকে ডেকে জানান যে, তারা তাদের পুরোনো চেনাজানা। তার কাছে কিছুটা অচেনা মনে হলেও পরে তাদের সাথে ওই নারী লঞ্চঘাট এলাকায় আসেন। এর পর আর কি ঘটেছে সেটা তিনি বলতে পারেননি।
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. চিনয়ময় হাওলাদার, স্কোপোলামিন মূলত নিউরোলোজিক্যাল ড্রাগ। এটি অপারেসনের কাজে ব্যবহার হয়। এটি চেতনানাশক। এ ড্রাগ প্রয়োগের পরে হ্যালোসিলেশন হয়। অতিরিক্ত প্রয়োগে হিতাহিত জ্ঞান থাকেনা।
কলাপাড়া থানার ওসি মো. জসিম জানান, এ ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। প্রতারকদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
|