বরিশালে শেবাচিমে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের ব্যাপক সংঘর্ষ।
|
![]() নিউজ ডেস্কঃ বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রোগীর স্বজন,বন্ধু ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার(১১) বিকেলের দিকে হাসপাতালের চতুর্থ তলার সার্জারী ১ ইউনিটে এই সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এসময় হাসপাতালের বেশকিছু আসবাবপত্র ভাঙচুর করাসহ মেয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের লাঞ্ছিতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং ঘটনাস্থল থেকে মৃত রোগীর সহপাঠি শাওন ও আনোয়ারকে আটক করে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল ইসলামিয়া কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ও ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়ার মহিষকান্দি এলাকার আনসার আলীর ছেলে রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ মোটরসাইকেলে দুই বন্ধু বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগর এলাকার বাসিন্দা হৃদয় এবং ওসমান গনিকে নিয়ে তালতলী বাজারের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন।পথিমধ্যে কাউনিয়া থানাধীন মহাবাজ এলাকায় মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের সাথে ধাক্কা খায়। এতে গুরুতর আহত তিন বন্ধুকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারী ১ ইউনিটে ভর্তি করে। বেলা আড়াইটার দিকে রিয়াদের মৃত্যু হলে স্বজনেরা চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তোলেন। এ নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সাথে তারা বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রুপ নেয়। রিয়াদের স্বজন মাসুদ ও তনু অভিযোগ করেন হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা একজন একজন করে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। এসময় আমরা বারবার বলছিলাম রিয়াদের অবস্থা বেশি খারাপ। কিন্তু তারা সেই কথা শোনেনি। রিয়াদ চিকিৎসা অবহেলায় মৃত্যুবরণ করে। এরপর রিয়াদের বন্ধুদের সাথে ইন্টার্নদের হাতাহাতি হয়। এর কিছুক্ষণ পর ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এসে কান্নারত রোগীর স্বজনদের ওপর হামলা চালায় এবং ব্যাপক মারধর শুরু করে। তবে স্বজনদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সার্জারি ইউনিটে দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসক অর্নব খান বলেন, রোগী মারা যাওয়ার পর কলেজের ইউনিফর্ম পরা মৃতের বন্ধু বান্ধব এসে ডিউটি ডাক্তারদের রুমে হামলা চালিয়ে আলমিরাসহ নানা আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এবং রুমে থাকা দুই নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করলে অন্য ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এসে তাদের বাধা দেয়। এতে তারা সংক্ষুব্ধ হয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপরও হামলা করে। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. রাকিন বলেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত রোগীকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হয়েছে। তারপরও মৃতের স্বজন ও বন্ধুরা এসে আমাদের ওপর হামলা করে। এমনকি তারা হুমকিও দিয়েছে। এই ঘটনার বিচার না হলে আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে যাবো। হাসপাতাল পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত তিনজন মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে যে মারা গেছে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে ছিলো। কিন্তু রোগীর স্বজন এবং বন্ধুরা এসে ইন্টার্নদের ওপর হামলা করেছে। এতে ক্ষুব্ধ ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা চলছে, সমাধানের পথ খুঁজছি। বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক লোকমান হোসেন বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। এসময় চিকিৎসকেরা মৃত রোগীর ২ সহপাঠিকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন। এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা সেবা বন্ধ করে দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি হামলার ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান ওসি। |