উদীচী জবি সংসদের আয়োজনে ‘বর্ষাকল্প ১৪২৯’ পালন।
সাকিব হোসাইন, জবি সংবাদদাতা।
|
জবি সংবাদদাতাঃ রোমাঞ্চকর ঋতু বর্ষার আগমন উপলক্ষে বুধবার বেলা ১২ টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে সারাদিনব্যাপী ‘এসো করো স্নান নবধারা জলে’ প্রতিপাদ্যে ‘বর্ষাকল্প’ ১৪২৯ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আয়োজনটি সম্প্রতি সীতাকুণ্ডে ঘটে যাওয়া অগ্নিকান্ডের ঘটনায় হতাহত সকল মেহনতী মানুষের প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদীচী সবসময়ই বলিষ্ঠ সাংস্কৃতিক আন্দোলন করে গেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংসদও সে ক্ষেত্রে কোন অংশে কমতি রাখেনি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকান্ডের পর উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরাই প্রথম তার প্রতিবাদে এগিয়ে এসেছেন বলে স্মৃতিচারণ করেন তিনি। সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন থেকে রক্ষার জন্য এ ধরণের আয়োজনের বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি। বর্ষাকাল আসলে তাঁর হৃদয় উদ্বোলিত হয় বলে তার সহধর্মিনীকে নিয়ে খানিক রসিকতাও প্রকাশ পায় তাঁর কথায়। সেই উচ্ছ্বাস থেকে তিনি কবি অসীম সাহার একটি কবিতা আবৃত্তি করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত খ্যাতিমান অভিনেতা ও নাট্যজন মাসুম আজিজ এবং উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহঃ সভাপতি, সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত গণসংগীতশিল্পী মাহমুদ সেলিম। উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা মাসুম আজিজের সহধর্মিনী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল, চারুকলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. বজলুর রশীদ খান, সহকারী অধ্যাপক মো. মাঈনউদ্দীন, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দসহ অসংখ্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীবৃন্দ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন উদীচী জবি সংসদের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য, নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সঞ্জীব কুমার দে। এরপর সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাফিজুল ইসলাম বক্তব্য প্রদান করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি জনাব আহসান হাবীব বিপু। গণসংগীতশিল্পী মাহমুদ সেলিম তাঁর বক্তব্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার গুরুত্ব তুলে ধরে কিভাবে সাম্প্রদায়িকতার বীজ আমাদের সমাজে অনুপ্রবেশ করছে তা তুলে ধরেন এবং এ থেকে উত্তোরণে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও শিল্পীদের ভূমিকা ব্যক্ত করেন। অভিনেতা মাসুম আজিজ অত্যন্ত সাবলীলভাবে তাঁর জীবনের সাংস্কৃতিক পথ পরিক্রমা তুলে ধরেন তাঁর বক্তব্যে। অসুস্থ শরীর নিয়েও তিনি এ ধরণের আয়োজনে আসতে পেরে তাঁর আন্তরিক আবেগ প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানের প্রথম ভাগে সকাল ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত উদীচী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের নানাবিধ পরিবেশনার পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি সংসদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রঙ্গভূমি অংশগ্রহণ করেছে। শুরুতে সংগীত পরিবেশন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব মো. মাহমুদুল হাসান। আরও সংগীত পরিবেশন করেন সংগঠনটির উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য, আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট এর সহযোগী অধ্যাপক দেবাশিস বিশ্বাস। সন্ধ্যা ৬টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক আবোল তাবোল, ট্রাভেলার্স, স্বপ্নবাজি, রিজেক্টেড ও মনের মানুষ ব্যান্ডদলগুলো রাত অব্দি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের খোলা প্রাঙ্গণে মনোমুগ্ধকর সংগীত পরিবেশন করেছে। দিনব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ আয়োজনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করেছে। |