কলাপাড়ায় বেড়িবাঁধ নির্মানে মাটির বদলে দেয়া হচ্ছে বালু, ডিজাইন মাফিক করা হচ্ছেনা কান্ট্রিসাইটের পরিমাপ।।
মোয়াজ্জেম হোসেন, কলাপাড়া।
|
কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি।। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে হুমকির মুখে পড়েছে উপকূলীয় মানুষের জীবন-জীবিকা। নদ-নদী ও বেশিরভাগ সরকারি খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এতে প্রতিবছর যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বেড়েছে লবণাক্ততা, ফলে কমে গেছে ফসল উৎপাদন, বিলুপ্ত হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ, তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির। কর্মসংস্থানের অভাবে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ অভিবাসন করতে বাধ্য হচ্ছে।
এলাকাবাসী ও উপকূলীয় এলাকা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, গত দের দশকেরও বেশি সময় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাসহ সকল ক্ষেত্রে। জলবায়ূর পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় বেড়িবাঁধ উচু করার কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্নিঝড় সিডরে নিজামপুর গ্রামের পাউবো’র ৪৭/১ পোল্ডারের বেরিবাঁধের বিভিন্ন অংশে ভাঙ্গন দেখা দেয়। এর পর ২০০৮ ঘূর্নিঝড় নার্গিস, ২০০৯ আইলা, ২০১৩ মহাসেন, ২০১৫ কোমেন, ২০১৬ রোয়ানু, ২০১৭ মোরা, ২০১৯ ফণী ও বুলবুল এবং ২০২০ আম্ফান, ২০২১ ইয়াস , ২০২২ অশনির তান্ডবে নিজামপুর বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হলেও সাগর মোহনা আন্ধারমানিক নদীর অস্বাভাবিক উচ্চতার জোয়ারে পানি ভাঙন কবলিত অংশ দিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে।
কলাপাড়ার পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা লতাচাপলী-ধুলাসার দুই ইউনিয়ন এবং কুয়াকাটা পৌরসভার রক্ষাকবচ ৪৮ নম্বর পোল্ডারের ৩৮ কিমি বেড়িবাঁধ আধুনিকভাবে উচুকরন করে বন্যা কিংবা জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধের মতো করে পুনঃনির্মাণ কাজ দ্রæত না করায় মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। বর্তমানে ওই বেড়িবাঁধটির উচ্চতা রয়েছে সমুদ্র থেকে পাঁচ দশমিক ১৮ মিটার। যা সাত দশমিক পাঁচ মিটার করা হবে। বাড়বে প্রস্থ। এজন্য উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প কাজ চলমান রয়েছে। এ কাজ শেষ হলেই ওই বাঁধের ওপর এলজিইডি পাকাকরন করতে পারবে। তবে ২০২৩ সালের আগে আর কার্পেটিং করার সুযোগ নেই। ২০২০ সালের জুন মাসে সকল কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজের ধীরগতির কারনে সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে ২০২২ সাল পর্যন্ত। তবে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে মানুষের। অনেক স্পটে বালু দেয়া হচ্ছে মাটির বদলে এবং কান্ট্রি সাইটের পরিমাপ ডিজাইন মাফিক করা হচ্ছেনা বলেও মানুষ অভিযোগ করেছেন। এছাড়া ৪৮ নম্বর পোল্ডারের ৩৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ পৃনরাকৃতিকরনের কাজ শুরু হয়েছে। উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প এ কাজটি করছে। ইতোমধ্যে ওই বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের স্লুইসগুলোর নির্মাণ ও মেরামত কাজ শেষের পথে। এডিবির অর্থায়নে ১৪০ কোটি টাকা ব্যয় এ উন্নয়ন কাজটি করছে কঙ্গম ইন্টারন্যাশনাল কনস্ট্রাকশন (সিকো)। সিইআইপি-১ প্রকল্পের আওতায় একাজটি হচ্ছে। এডিবির অর্থায়নে এ পোল্ডারের ৩৮ দশমিক শূন্য নয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ উচুসহ পুনারাকৃতিকরণের কাজ হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪৮ নম্বর পোল্ডারের অনন্তপাড়া ব্রিজ থেকে লতাচাপলী হয়ে আলীপুর বাজার পর্যন্ত কুয়াকাটাগামী বিকল্প ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এলজিইডি ডিপার্টমেন্ট পাকা সড়ক করে অনেক আগে। দুই/তিন বছর ধরে খানা-খন্দে একাকার হয়ে গেছে। ওই সড়ক মেরামত করতে কলাপাড়া এলজিইডি ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর টেন্ডার আহ্বান করে। এজন্য ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ কোটি ২৭ লাখ ১১হাজার ১৪০ টাকা। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড অনাপত্তিপত্র না দিয়ে বাঁধের উচ্চতা বৃদ্ধির কথা বলে আপত্তি তোলে। জানানো হয় জলবায়ূর পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় জলোচ্ছ্বাস থেকে মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় বেড়িবাঁধ উচু করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ কারনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) এর মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা স্মাারকের আলোকে বাঁধসমূহ ডিজাইন লেভেলে উন্নীত না করা পর্যন্ত রাস্তা কার্পেটিং বা পাকা করা সমীচিন হবে না। ২০১৯ সালের ৫ ফেব্রæয়ারি পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহজাহান সিরাজ এলজিইডি কলাপাড়ার উপজেলা প্রকৌশলীকে এমন চিঠি দেন। বন্ধ হয়ে যায় খানা-খন্দে ভরা ১২ কিমি বেড়িবাঁধের কার্পের্টিং এর কাজ। তবে ফের এই কাজ যথা নিয়মে শুরু হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) এর মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা স্মাারকের আলোকে বাঁধসমূহ ডিজাইন লেভেলে উন্নীত না করা পর্যন্ত রাস্তা কার্পেটিং বা পাকা করা সমীচিন হবে না মর্মে চিঠি দিয়েছে। ২০১৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহজাহান সিরাজ এলজিইডি কলাপাড়ার উপজেলা প্রকৌশলীকে চিঠি দেন। ইতোমধ্যে ধানখালীর পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র গেট থেকে লোন্দা-টিয়াখালী ব্রিজের সংযোগ সড়ক পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার বাঁধের উচ্চতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
|