শীতে যখন, ব্যথা বাড়ে
|
সময় নিউজ বিডি: সারা বছর হাঁটু বা কোমরব্যথায় ভুগছেন, কিন্তু শীত এলে যেন কষ্টটা দ্বিগুণ হয়ে ওঠে। নড়তেচড়তেও বেজায় কষ্ট। কম্বলের নিচ থেকে বের হতে গিয়ে যেন ককিয়ে ওঠেন বয়স্ক মানুষেরা। বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যানও বলছে, শীতকালে বিশ্বজুড়ে বয়স্ক মানুষের হাড় ও সন্ধিব্যথায় চিকিৎসা নেওয়ার হার অন্য সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেড়ে যায়। কিন্তু কেন এমন হয়? সমাধানই-বা কী? শীতে কেন ব্যথা বাড়েশীত এলে বাতব্যথার রোগীদের ব্যথা বাড়ার পেছনে কিছু কারণ আছে বলে ধারণা করা হয়। যেমন শীত বা ঠান্ডায় আমাদের পেইন রিসেপ্টর বা ব্যথার অনুভূতি গ্রহণকারী কোষগুলো বেশি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। পরিবেশের তাপমাত্রা কমার সঙ্গে বায়োমেট্রিক প্রেশার বা পারিপার্শ্বিক বায়ুচাপ নেমে যায়। ফলে সন্ধির ভেতর টিস্যুগুলো ফুলে যায়, সন্ধির ভেতর চাপ বাড়ে, ব্যথাও বেড়ে যায়। আবার ঠান্ডা আবহাওয়ায় অন্য সময়ের চেয়ে পেশির সংকোচন বেশি ঘটে, যাতে ব্যথা আরও বাড়ে। এ সময় হাত পায়ের আঙুলে রক্তসঞ্চালন কমে যায়, ব্যথা বাড়ে, স্টিফনেস বা জড়তাও বাড়ে। শীতের সময় সূর্যালোক কম থাকে, দিন হয় ছোট। আমরা ভিটামিন ডি পাই কম। এতে হাড় আরও দুর্বল হয়। এসব মিলিয়ে শীত এলে বাতব্যথার রোগীদের দুর্ভোগ বাড়ে। বাত দুই ধরনের। একটা প্রদাহজনিত (রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এসএলই, গাউট ইত্যাদি), অন্যটি প্রদাহ ছাড়া (অস্টিওআর্থ্রাইটিস, মেকানিক্যাল ব্যথা বা আঘাতজনিত ব্যথা)। গবেষণা বলছে, দুই ধরনের ব্যথাই শীতে বাড়তে পারে। তবে বিষয়টা হলো শীতে বাতের তীব্রতা বাড়ে না, তবে সন্ধি বা হাত–পায়ের পেশির ব্যথার অনুভূতি বাড়ে। যা করবেনশীত এলে সহজ কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে বাতব্যথার রোগীরা একটু আরামে থাকতে পারবেন। এখানে রইল কিছু টিপস— উষ্ণ থাকুন: গরম জামাকাপড় পরুন এবং নিজেকে উষ্ণ রাখতে চেষ্টা করুন। পায়ে মোজা পরলে ভালো। ব্যথার জায়গা, যেমন হাঁটুও ঢেকে রাখুন গরম কাপড়ে। কয়েক স্তরে জামাকাপড় পরুন, গরম লাগলে বাইরে থেকে একটি করে স্তর খুলতে পারবেন। গরম পানিতে সাঁতার কাটলে বা হট বাথ টাবে গোসল করলে বেশ আরাম পাওয়া যাবে। স্বাস্থ্যকর খাবার খান: সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার আপনাকে শীতের সঙ্গে লড়তে সাহায্য করবে। অতিরিক্ত তেল–চর্বিযুক্ত খাবার, বেশি চিনি বা শর্করা সমস্যা বাড়াবে। ডায়াবেটিসের রোগীর শর্করা বাড়লে ব্যথার অনুভূতি বাড়বে। গরম চা, গ্রিন টি, গরম স্যুপ ইত্যাদি শরীরের তাপমাত্রা বাড়াতে সাহায্য করবে। সচল থাকুন: শীতকালে বয়স্কদের চলাফেরা কমে যায়। অনেকেই সারা দিন লেপ বা কাঁথার তলায় কাটিয়ে দেন। এতে সন্ধির স্টিফনেস আরও বাড়ে। তাই সচল থাকতে চেষ্টা করুন। হাঁটা বা ব্যায়াম বন্ধ করবেন না। শারীরিক ব্যায়াম বা কসরত করলে শরীরে ও সন্ধিতে রক্তচলাচল বাড়বে, পেশি ও হাড়ের শক্তি বাড়বে, বাড়বে স্থিতিস্থাপকতা। আর্থ্রাইটিস ফাউন্ডেশন পরামর্শ দিচ্ছে, কোনো চাপ কমান: যেকোনো মানসিক চাপ ব্যথা–বেদনার অনুভূতি বাড়ায়। গবেষণা বলছে, শীতে আমাদের বিষণ্নতা ও চাপ বাড়ে। তাই মানসিক চাপ কমান। ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন, চাইলে যোগব্যায়াম ও ধ্যান করতে পারেন। মোজা পরুন: হাত ও পায়ে মোজা পরতে পারেন। এতে হাত–পায়ে আঙুল উষ্ণ থাকবে, রক্তচলাচল ঠিক থাকবে। তাপ ভেতরে আটকে থাকবে। ভিটামিন ডি: শীতকালে দিন ছোট আর সূর্যের আলোয় ভিটামিন ডি কম পাওয়া যায়। এটা প্রমাণিত যে ভিটামিন ডি-এর অভাবে হাড়ের সমস্যা বাড়ে। দৈনিক ৮০০ থেকে ১০০০ ইউনিট ভিটামিন ডি গ্রহণ করুন, হয় প্রাকৃতিকভাবে রোদ থেকে বা চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন। চাই পর্যাপ্ত ঘুম: রাতে উষ্ণ ঘরে আরামদায়ক টানা ছয় থেকে সাত ঘণ্টার ঘুম অনেকটাই আরাম এনে দেবে।শীতকালে অনেকে রুম হিটার ব্যবহার করে থাকেন, অনেকে বিছানায় হট ওয়াটার ব্যাগ বা বোতল নিয়ে শুয়ে পড়েন।দুর্ঘটনা না ঘটে সেদিকে লক্ষ রাখবেন।ঘুমের মধ্যে অতিরিক্ত গরম ব্যাগে বা পানি লিক করে পুড়ে যেতে পারে।রুম হিটারে শরীর থেকে পানি বের হয়ে (ডিহাইড্রেশন) যায়। তাই যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করুন। |