রাজধানীতে নগর পরিবহণে অনিয়মই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে, স্বস্তি এলেও টিকিট কাটে না যাত্রী,পকেট ভরে চালকের!!
মোঃ রাসেল সরকার, বিশেষ প্রতিনিধি ঢাকা।
|
নিউজ ডেস্কঃ রাজধানী মহানগরীতে চলাচল করা বাসগুলোয় যাত্রীদের অভিজ্ঞতা তিক্ততায় ভরা। বাসে ওঠা-নামায় সমস্যা; রাস্তার মাঝে দুম করে বাস থামিয়ে যাত্রী তোলা-নামানো; অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া;বেশি ভাড়া আদায়,চালক-সহকারীদের বাজে ব্যবহার নিত্যদিনের। এসব থেকে রেহাই দিতে নগরীতে উদ্বোধন করা হয় ঢাকা নগর পরিবহনের। এখন স্টপেজে ৫-৭ মিনিট দাঁড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে নির্ধারিত গন্তব্যের বাহন। টিকিট কেটে হুড়োহুড়ি ছাড়া স্বাভাবিকভাবে চড়া যাচ্ছে নগর পরিবহনের তিন রুটের বাসে। এসব বাহনের সিটগুলো প্রশস্ত, দুই সিটের মাঝেও ফাঁকা রয়েছে বেশ। শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) সকাল সোয়া নয়টায় ঢাকা নগর পরিবহনের ২১ নম্বর রুটের বাসে মোহাম্মদপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত ভ্রমণ, অনুসন্ধানী প্রতিবেদক এ সময় উঠে আসে সড়কের নানা অনিয়ম ও নির্দেশনা অমান্যের নানা চিত্র। অনিয়মের মধ্যে সবার আগে যেটি হচ্ছে, সেটি যত্রতত্র টিকিট ছাড়া বাসে যাত্রী তোলা। মোহাম্মদপুর বাস স্টপেজ থেকে টিকিট কেটে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে বাসে উঠে সন্তোষজনক অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। বিপত্তি বাধে কয়েক মিনিট পর। নগর পরিবহনের বাসটি কিছুদূর গিয়ে টিকিট ছাড়া যাত্রী তোলে। এ অনিয়ম কিছুক্ষণ পরপরই করছিলেন বাসের চালক। যেসব যাত্রী টিকিট ছাড়া বাসে ওঠেন, তারা ভাড়া পরিশোধ করেন চালককে। স্বভাবতই বাসের এ ভাড়া বঞ্চিত হচ্ছে ঢাকা নগর পরিবহন কর্তৃপক্ষ। এক যাত্রীকে টিকিট ছাড়া বাসে ওঠার কারণ জানতে চায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদক। তিনি বলেন, টিকিটের ব্যাপারে জানি না। খালি পাইসি, দ্রুত যাইতে হইব, উঠসি। এ সময় শুভ রহমান নামে এক যাত্রী জানান, টিকিট কেটে মোহাম্মদপুর স্টপেজ থেকে বাসে ওঠেন তিনি। বাসের পরিবেশ ভালো, কিন্তু চালক ও হেলপার সরকারি নির্দেশ অমান্য করেছেন বার বার। স্টপেজ ছাড়াই যাত্রী তুলেছেন। ভাড়াও ঢুকিয়েছেন নিজেদের পকেটে। বাসের চালককে ভাড়া দিচ্ছেন এক যাত্রীভোলা জেলার বাসিন্দা নেছার উদ্দিন শাহিন যাবেন সাইনবোর্ড। পল্টন থেকে বাসে ওঠেন তিনি। টিকিটের জন্য ৫০ টাকার নোট দেন। ফেরত দেওয়া হয় ২০ টাকা। অথচ তাকে যে টিকিট দেওয়া হয়, তাতে মূল্য লেখা ২০ টাকা। বেশি ভাড়া কেন রাখা হয়েছে জানতে চাইলে চালক বা হেলপার কেউ কোনো জবাব দেননি। শাহিনের অভিযোগ, ২০ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা রাখা বিরাট অনিয়ম। কিন্তু কিছু বলার নেই। ঢাকা শহরে এসেছি ভাইয়ের বাসায়। এখন ঠিকভাবে সাইনবোর্ড যেতে পারলই হলো। ফিরতি পথেও অনুসন্ধানী এ প্রতিবেদক ঢাকা নগর পরিবহনের বাস ব্যবহার করেন। তখনও একই চিত্র দেখতে পান তিনি। নগর পরিবহনে পুরোপুরি শৃঙ্খলা না ফেরার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাবিহা পারভীন। পরে অনুসন্ধানী প্রতিবেদক এ-র সামনেই বাসটির তথ্য সংগ্রহ করে বিআরটিসিকে এ ব্যাপারে জানান। সাবিহা বলেন, বাসটির মালিক বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি)। সেটির চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাথমিক যে সংকট সেটি কেটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের এ নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। এ জন্য যাত্রী-মালিক-শ্রমিকদের সচেতন হতে হবে। তাহলেই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে। অন্যান্য সময় সড়কে বাস ও অন্যান্য বাহনের অনিয়ম রোধে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালত বসে। কিন্তু শুক্রবার হওয়ায় আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটরা সড়ক তদারকিতে ছিলেন না। এ সম্পর্কে বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক হেমায়েত উদ্দিন বলেন, শুক্রবার কোনো কোর্ট বসেনি। তবে, সাধারণ দিনগুলোয় ভ্রাম্যমাণ আদালত সড়কে থাকবে। অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। |