বরগুনার বেতাগীতে যৌতুকের টাকা না পাওয়ায় স্ত্রীকে হত্যা!!
মাহমুদ হাসান তাপস বরগুনা।
|
![]() নিউজ ডেস্কঃ বছর পাঁচেক আগে মাসুদ খানের সাথে বিথী আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে বিথীকে তার স্বামী ও শ্বাশুড়ি যৌতুকের জন্য নির্যাতন করতেন। ঘটনার দিন সকালে স্বামী ও শ্বাশুড়ির সাথে যৌতুকের টাকা নিয়ে বিথীর কথা কাটাকাটি হয়। এরপর দুপুরে ঘরের দোতলায় আড়াঁর সাথে ফাঁস দেয়া অবস্থায় তাকে শ্বশুরবাড়ির লোকজনেরা উদ্ধার করে। এ অবস্থায় বিথীকে বরগুনা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর বিথীর মরদেহ রেখে তার স্বামী এবং শ্বশুর শ্বাশুড়ি পালিয়ে যায়।
শনিবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে নিহত গৃহবধূর মা লিমা বেগম মুঠোফোনে সোনালী নিউজকে বলেন, ঘটনার আগের দিন, মেয়ে দিথীর সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয়। “মেয়ে কেঁদে কেঁদে আমাকে বলে, স্বামী মাসুদ আমাকে বেধড়ক মারধর করেছেন, আজকের মধ্যে ৪০ হাজার টাকা না দিলে আমাকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিচ্ছে। ‘আমাকে এই বাড়ি থেকে নিয়ে যাও মা’ এমনটা বলে কেঁদে উঠলে, স্বামী মাসুদ ফোনটি হাত থেকে নিয়ে যায়”।
এরপর থেকেই ফোন বন্ধ, আর কথা হয় নাই মেয়েটির সাথে । পরদিন ১২ জানুয়ারি দুপুরে শুনতে পাই আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আমার মেয়ে একটি ছোট সন্তান রেখে আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে স্বামী মাসুদ। পরে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে। ৪০ হাজার টাকার জন্যই মেয়েকে হত্যা করেছে।
বরগুনার বেতাগীতে গৃহবধু বিথী আক্তারের (২৪) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় স্বামী মো. মাসুদ খানকে (৩২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে তাকে উপজেলা সরিষামুড়ি ইউনিয়নের গাবতলী গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার মাসুদ খান ওই গ্রামের রসূল খানের ছেলে। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় মাসুদ খানকে প্রধান আসামী করে মামলা দায়ের করেন নিহতের মা লিমা বেগম। এতে সহযোগী হিসেবে বিথীর শ্বাশুড়ি ফজিলা বেগম ও শ্বশুর রসূল খানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে মাসুদকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
বেতাগী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে নিহত বিথীর বাবা আনয়ার হোসেনের দাবী যৌতুকের টাকা না দেয়ায় বিথীর স্বামী ও শ্বাশুড়ি মিলে তাকে পিটিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চাইছে।
আনোয়ার হোসেন বলেন, বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে তারা সব সময় নির্যাতন করতো। কিছুদিন আগে ফ্রিজের জন্য চাপ দিলে আমি ১০ হাজার টাকা দেই। এরপর আবার বিথীর শ্বাশুড়ি টিউবওয়েল বসানোর জন্য আমার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা এনে দেবার জন্য চাপ দেয়। আমার মেয়ে বাবার বাড়ি থেকে এই টাকা এনে দিতে পারবে না জানালে তাদের মাঝে ঝগড়া হয়। এরই একপর্যায়ে আমার মেয়েকে ঘরের দরজা লাগিয়ে তার স্বামী আর শ্বাশুড়ি মিলে পিটিয়ে ও গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
গাবতলী গ্রামের বাসিন্দা মোতালেব হোসেন বলেন, কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে হত্যা না করলে আত্মহত্যার পর লাশ হাসপাতালে রেখেই পালিয়ে যেতে পারে না।
এলাকার একাধিক ব্যাক্তি বলেন, বর্তমান সময়ে এমন ঘটনা বিরল। আমরা এর সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক শুভ বাড়ৈ বলেন, নিহত বিথীর মৃতদেহে একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। তাতে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত যে তাকে মারাত্মকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বেতাগী থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসন বলেন, মামলায় অভিযুক্ত নিহত বিথীর স্বামী মাসুদকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
|