জমজমের পানির নামে কী বিক্রি হচ্ছে বায়তুল মোকাররমে।
এস এম আওলাদ হোসেন।।
|
![]() নিউজ ডেস্কঃ সৌদি আরবের পবিত্র জমজম কূপের পানির নামে রাজধানী ঢাকার বায়তুল মোকাররমে দেদার বিক্রি হচ্ছে বোতলজাত পানি। কোনো দোকানে প্রকাশ্যে, আবার কোনো দোকানে গোপনে বিক্রি হচ্ছে এই পানি। দাম সাধারণ পানির তুলনায় ৫০ থেকে ৬০ গুণ বেশি। তবে এই পানি সত্যিই জমজমের কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানির সুযোগ না থাকায় হাজি কিংবা সৌদি আরব ভ্রমণকারী কিংবা হাজিদের কাছ থেকে তা সংগ্রহ করা হয়। আর আলেমরা বলছেন, এই পানি নিয়ে ব্যবসাকরা অন্যায়। জমজমের পানিকে বিশ্বের সেরা পানি বলে বিশ্বাস করেন বিশ্বের মুসলমানরা। সৌদি আরবের পবিত্র কাবা শরিফ থেকে ২১ মিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত জমজম কূপ। হজ বা ওমরাহ পালনের সময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ সহজেই জমজমের পানি পান করতে পারেন। এমনকি এই পানি দিয়ে ওজু এবং গোসলও করতে পারেন। ফেরার সময় পাঁচ লিটার পানি সঙ্গে আনার সুযোগ পান হাজিরা। এ জন্য তাদের গুনতে হয় ১০ সৌদি রিয়াল (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৮০ টাকা)। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই পানি দেশে এনে কিছু লোক চড়া দামে বিক্রি করে। রাজধানী ঢাকায় অনেক আগে থেকেই অনেকটা প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে অনিবন্ধিত কথিত এই জমজমের পানি। এর ওপর কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারিও নেই। বায়তুল মোকাররম মার্কেটের নিচতলায় আত্-তাক্বদীর আতর হাউসে ইহরামের কাপড়, তোয়ালে, জায়নামাজ, আতর, টুপির পাশাপাশি পাওয়া যায় জমজমের পানি। দোকানের মালিক মোহাম্মাদ উল্লাহ বলেন, আমার দোকানে দুই ধরনের পানি পাওয়া যায়। একটা পাঁচ লিটারের বোতল আছে, যেটা একবারে ইনটেক থাকে। সৌদি আরবে যেভাবে কার্টন প্লাস্টিক করা থাকে, ঠিক সেভাবেই পাওয়া যাবে। পাঁচ লিটার পানি ৪ হাজার ৫০০ টাকা। তবে আরেকটা আছে যেটি কার্টনে থাকে না, সেটিও আসল জমজমের পানি। এটা তিন হাজার টাকায় বিক্রি করে থাকি। এ ছাড়াও ২৫০ গ্রামের এক বোতল পানি ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। এই পানি কিভাবে সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে এই দোকান মালিক দাবি করেন, যারা হজ বা ওমরাহ করতে যান তাদের আগে থেকে বলে রাখি। অনেক পরিবার থেকে এক সঙ্গে অনেকে হজে যায়। তারা একটি রেখে বাকিটা বিক্রি করে দেয়। আবার অনেকে ব্যবসায়িক কাজে সৌদি গেলে নিয়ে আসে। বায়তুল মোকাররমের মার্কেটে অনেক দোকানদার আবার গোপনে এই জমজমের পানি বিক্রি করেন। তাদের কাছে জমজমের পানির কথা জানালে প্রথমে না বললেও পরিস্থিতি বুঝে ম্যানেজ করে দেয়। বিক্রেতারা দাবি করেন হাজিদের কাছে টাকা দিয়ে এগুলো আনা হয়। তারা প্রতারণা করবে না বলে বিশ্বাস রাখেন তারা। জমজমের পানি বিক্রির বিষয়ে বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মো. মিজানুর রহমান বলেন, কেউ যদি জমজমের পানি বিক্রি করে থাকলে তা অন্যায় কাজ। এটা করা ঠিক না। এই পানি আল্লাহর একটা নিয়ামত। যারা হজ বা ওমরাহ করতে যাবেন তারা খাবেন ব্যবহার করবেন। আবার পরিবার-আত্মীয়দের জন্য নিয়ে আসেন। আমাদের দেশে এই পানি নিয়ে যদি ব্যবসা করা হয় এটা শরিয়াহভাবে ভালো কাজ না। জমজম পানির কোনো রঙ বা গন্ধ নেই, তবে এর বিশেষ একটি স্বাদ রয়েছে। সৌদি আরবের বাদশাহ সৌদ বিশ্ববিদ্যালয় জমজম পানি পরীক্ষা করে এর পুষ্টিগুণ ও উপাদানসমূহ নির্ণয় করেছে। এই পানিতে সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, বাইকার্বোনেট, ক্লোরাইড, ফ্লোরাইড, নাইট্রেট এবং সালফেটের উপাদানসমূহ রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্বাভাবিক পানিতে আর্সেনিকের গ্রহণযোগ্য মাত্রা প্রতি লিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম। জমজমের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা এর চেয়ে অনেক কম। মক্কায় নতুন প্রতিষ্ঠিত বাদশাহ আব্দুল্লাহ জমজম পানি বিতরণ কেন্দ্রটি উন্নত সুবিধায় সজ্জিত এবং সেখানে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী বোতলজাত করা হয়। দেশটির জিওলজিক্যাল সার্ভের একটি ‘জমজম স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’ রয়েছে। এই সেন্টারটি এই কূপের পানির মান, গভীরতা, অমøতার মাত্রা এবং তাপমাত্রার দিকে নিয়মিত নজর রাখে। ২০১১ সালের ৫ মে বিবিসি এক প্রতিবেদনে দাবি করে লন্ডনে অবৈধভাবে বিক্রি হওয়া জমজমের পানিতে আর্সেনিক দূষণ রয়েছে। কিন্তু এই দাবি তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করে সৌদি আরব। ওই সময়ে দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়, জমজমের পানি পরীক্ষিত এবং আসল জমজম পানিতে কোনো আর্সেনিক নেই। উল্লেখ্য, আসল জমজম পানি মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র। শুধু সৌদি আরবের একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে এই পানি উৎসরিত হয়। আর এটি কোনোভাবেই বৈধ উপায়ে ওই দেশ থেকে বাইরে বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানি সম্ভব নয়। তাই দোকানে বিক্রি হওয়া পানির উৎসের কোনো নিশ্চয়তা নেই। |