অপহরণের পর দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করতো ‘সালেহ বাহিনী’গ্রেপ্তার-৬।
কায়সার হামিদ মানিক,স্টাফ রিপোর্টার কক্সবাজার।
|
নিউজ ডেস্কঃ কক্সবাজারের টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ে অবস্থান করে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে রোহিঙ্গা হাফিজুর রহমান ওরফে সালেহ। নিজের নামে ‘সালেহ বাহিনী’ তৈরি করে দুর্গম পাহাড়ে বসে এসব অপহরণের নেতৃত্ব দিতেন সালেহ বলে জানিয়েছে র্যাব। শুক্রবার (৫ মে) রাত ১০টা থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত বাহারছড়ার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে হাফিজুর রহমান ওরফে সালেহ উদ্দিন ও তার অন্যতম সহযোগী সোহেল ডাকাতসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। শনিবার (৬ মে) র্যাব-১৫ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- ‘দলের প্রধান’ হাফিজুর রহমান ওরফে ছালেহ উদ্দিন ওরফে ছলে ডাকাত (৩০), তার সহকারী নুরুল আলম ওরফে নূরু (৪০), আক্তার কামাল ওরফে সোহেল (৩৭), নুরুল আলম ওরফে লালু (২৪), হারুনুর রশিদ (২৩) এবং রিয়াজ উদ্দিন ওরফে বাপ্পী (১৭)। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, ইজিবাইক, অটোরিকশার চালকের ছদ্মবেশে চক্রের সদস্যরা হ্নীলা, হোয়াইক্যং, উনচিপ্রাং, শ্যামলাপুর, জাদিমোড়া এলাকার বাসিন্দাদের অপহরণ করে দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করতো। ১২ থেকে ১৫ সদস্যের দলটি মাদক ব্যবসা ও ডাকাতির সঙ্গেও জড়িত রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, হাফিজুর রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরসার সঙ্গে জড়িত। ২০১২ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এলেও রোহিঙ্গাদের তালিকাভুক্ত হয়নি তিনি। বাংলাদেশে অপরাধ করে মিয়ানমার গিয়ে আশ্রয় নেন তিনি। হাফিজের বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ এনে র্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, পাহাড়ে অভিযানে গেলে র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি করে সালেহ বাহিনীর সদস্যরা। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচটি গুলি, তিনটি দেশীয় একনলা বড় বন্দুক, দুটি একনলা মাঝারি বন্দুক, ছয়টি একনলা ছোট বন্দুক, ১৭টি তাজা কার্তুজ, চারটি খালি কার্তুজ, দুটি ছুরি ও ছয়টি ধারালো দা উদ্ধার করা হয়েছে। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সালেহের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী দলটি অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও ডাকাতির কথা স্বীকার করেছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের তথ্যে র্যাব জানায়, গত ১৮ ডিসেম্বর টেকনাফের বাহারছড়া এলাকার ১০ জন কৃষক, ২ জানুয়ারি রোহিঙ্গা শরণার্থী রেজুয়ানা, ২৬ মার্চ ন্যাচারাল পার্কের দর্শনার্থী হ্নীলার দদমিয়ার বাসিন্দা কবির আহাম্মদের ছেলে রিদুয়ান সবুজ ও একই এলাকার বাসিন্দা মাওলানা আবুল কালামের ছেলে নুরুল মোস্তফা, ১৫ এপ্রিল ফুলের ডেইল এলাকা থেকে বাবুল মেম্বারের ছেলে ফয়সাল, ৩০ এপ্রিল রোহিঙ্গা হামিদুল্লাহ এবং ৩ মে রোহিঙ্গা আবুল কালামসহ অনেক ব্যক্তিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ে জড়িত বলে স্বীকার করেছে। এর বাইরেও অর্ধশতাধিক অপহরণে এ গ্রুপ জড়িত রয়েছে। র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, ২০১৩ সালে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যান এবং তখন থেকেই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন তিনি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে আবারও অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে উখিয়া ও কক্সবাজারে অবস্থান করেন তিনি। আক্তার কামাল সোহেল ছালেহ উদ্দিনের অন্যতম সহযোগী। তিনি অপহরণের পরিকল্পনা এবং অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ছালেহের নির্দেশনায় বিভিন্ন কার্যক্রমের সমন্বয় করতেন। অপহরণ, ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে তার বিরুদ্ধে উখিয়াসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় ১০টির বেশি মামলা রয়েছে। নুরুল আলম নুরুর বিরুদ্ধে উখিয়াসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় খুন, অস্ত্র, মাদকসহ ছয়টির বেশি মামলা রয়েছে। অন্যদের বিরুদ্ধেও এমন সংখ্যায় মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল হালিম জানান, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান সালেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণসহ ছয়টির বেশি মামলা রয়েছে। র্যাব মামলা করে থানায় সোপর্দ করার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |