রাত পোহালেই কক্সবাজার পৌরসভায় নির্বাচন : ৪৩টি কেন্দ্রে থাকছে ১৮ ম্যাজিস্ট্রেট,৫ প্লাটুন বিজিবি,র্যাব ও পুলিশ মোতায়েন।
কায়সার হামিদ মানিক,কক্সবাজার।
|
![]() নিউজ ডেস্কঃ রাত পোহালেই সোমবার (১২ জুন-২০২৩) সকালে কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন। ইতিমধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। রবিবার নির্বাচনের সরঞ্জামাদি কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছেছে। নির্বাচনে ৫ জন মেয়র প্রার্থী, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫৮ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনি প্রচার প্রচারণা শেষ হয়েছে। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীরর সঙ্গে নারিকেল গাছ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ’র হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে সোমবার নির্বাচনে পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের ৪৩টি ভোটকেন্দ্রের সব কটি কেন্দ্রকেই অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ প্রশাসন। নির্বাচনকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোয় ১৮ ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পাঁচ প্লাটুন বিজিবি,র্যাব ও পুলিশের অতিরিক্ত টহল রাখা হয়েছে। কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শিমুল শর্মা জানান,পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে পৌরসভার ৪৩টি কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। পৌরসভার ৪৩টি কেন্দ্রের ২৩টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্বাচনে মোট ৯৪ হাজার ৮০২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৯ হাজার ৮৭৯ জন ও নারী ভোটার ৪৪ হাজার ৯২৩ জন। তিনি আরও জানান, নির্বাচনে ১২টি কেন্দ্রে ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট,৩জন ভ্রাম্যমান ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। এছাড়া পাঁচ প্লাটুন বিজিবি সদস্যসহ র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। জানা গেছে,কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কুতুবদিয়াপাড়ার ভোটকেন্দ্র মুহিউচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৫৬১। আওয়ামী–সমর্থক ভোটারের আধিক্য থাকলেও কেন্দ্রটির অবস্থান স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী (আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত) মাসেদুল হক ওরফে রাশেদের (নারকেলগাছ) বাড়ির কাছে। তবে আওয়ামী লীগ–মনোনীত প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীর (নৌকা) অভিযোগ, কেন্দ্রটিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন নারকেল গাছের সমর্থকেরা। এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার ৪৩টি কেন্দ্রের প্রতিটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকবেন পুলিশের ১ জন উপপরিদর্শক (এসআই), ৩ জন কনস্টেবল ও ১২ জন আনসার সদস্য। প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে স্ট্রাইকিং ফোর্সের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও পুলিশের পৃথক টহল থাকবে। ১ নম্বর ওয়ার্ডের সমিতি পাড়ায় ইসলামিয়া রিসার্চ সেন্টার (কওমি মাদ্রাসা) কেন্দ্র, দক্ষিণ কুতুবদিয়াপাড়া ইসলামিয়া দারুসসুন্নাহ মাদ্রাসা, ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিমানবন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, এয়ারপোর্ট পাবলিক হাইস্কুল কেন্দ্র, সৈকত বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলো স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী মাসেদুল হকের কাছাকাছি এলাকায়। এসব কেন্দ্রে অন্তত ২২ হাজার ভোটার রয়েছেন। আগের নির্বাচনগুলোয় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসেদুল হক নৌকা প্রতীকের জন্য কেন্দ্রগুলোয় তৎপরতা চালাতেন। এখন তিনি নৌকার বিরুদ্ধে। সুষ্ঠু ভোট হলে তিনিই মেয়র নির্বাচিত হবেন জানিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসেদুল হক বলেন, ‘নৌকার সমর্থকেরা শহরের ৩, ৪, ৫, ৬, ৮, ১০ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তত ১৮টি কেন্দ্রে ভোট কারচুপির চক্রান্ত করছেন। নারকেল গাছের সমর্থকদের কেন্দ্রে না যেতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। আমরা সুন্দর-শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই।’ অন্যদিকে, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কস্তুরাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পেশকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টেকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদ তিতুমীর ইনস্টিটিউট কেন্দ্রকেও অতি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্র নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীর বাড়ির আশপাশের এলাকায়। জয়লাভের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, তিনি টানা ২১ বছর ধরে পৌরসভার কাউন্সিল, প্যানেল মেয়র ও ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তা ছাড়া গত তিন বছরে পৌরসভার ৩৯ কিলোমিটার পাকা সড়ক, ড্রেনসহ অন্তত ৫০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। আরও উন্নয়নের জন্য ভোটাররা নৌকাতেই ভোট দেবেন। তবে তিনি অভিযোগ করেন, পৌরসভার ১, ২, ৩, ৮ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪টির বেশি কেন্দ্রে নৌকার সমর্থক ভোটারদের কেন্দ্রে না যেতে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন নারকেলগাছের সমর্থকেরা। সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানের স্বার্থে এসব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে র্যাব, বিজিবি ও পুলিশের উপস্থিতির দাবি করেন মাহাবুব। ১২ জুনের নির্বাচনে মেয়রপদে ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫৮ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অপর তিনজন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হলেন জগদীশ বড়ুয়া (হেলমেট), জোছনা হক (মোবাইল ফোন) ও মো. জাহেদুর রহমান (হাতপাখা)। জোছনা হক শুরু থেকেই স্বামী মাসেদুল হকের নারকেলগাছের পক্ষে প্রচারণা চালান। পৌরসভার মোট ভোটারসংখ্যা ৯৫ হাজার ৩৮৬। ভোটাররা বলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মাসেদুল হকের নারকেলগাছের সঙ্গে মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীর নৌকার। পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এস এম শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ইভিএমের এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। |