লক্ষ্মীপুরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ
এস এম আওলাদ হোসেন। লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি।
|
![]() নিউজ ডেস্কঃ লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন পাঁচপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মহিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের এক সহকারি শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়াগেছে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে (৮ জুলাই) শনিবার দুপুরে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে অপসারণের দাবীতে বিদ্যালয়ের সম্মুখে অভিবাবক ও এলাকাবাসী বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।
খবর পেয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিচারের আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।
জানাযায়, লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন পাঁচপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মহিউদ্দিন বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারি শিক্ষিকা আসমাউল হোসনাকে দীর্ঘদিন ধরে বিয়ের প্রস্তাব সহ নানা ভাবে যৌন হয়রানি করে আসছে। ঘটনাটি তিনি তার সহকর্মী শিক্ষক শিক্ষিকা ও বিদ্যালয়ের সভাপতি এবং কমিটির সদস্যদের অবহিত করলেও বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুর রহমান বাবু প্রধান শিক্ষকের পক্ষ নেওয়ায় কমিটি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি।
এ দিকে প্রধান শিক্ষকের হয়রানি মাত্রা দিন দিন বেড়ে চললে ঘটনাটি বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, অভিবাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভায় অভিবাবক সদস্যরা প্রধান শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির বিচার দাবী করলে সভাপতি তা এড়িয়ে যান। এ সময় কমিটির অভিববাক সদস্যরা সভা বয়কট করে প্রতিবাদ জানান। অভিবাবক ও এলাকাবাসী খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের সম্মুখে জড় হয়। এ সময় তারা প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির অপসারণ দাবী করে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। খবর পেয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত মফিজ উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষিকা আসমাউল হোসনা জানান, তার স্বামী মাহবুবুর রহমান অসুস্থ্য। তার একমাত্র সন্তান মেডিকেল কলেজে পড়ালেখা করছে। প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দিন তাকে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ্য স্বামীকে তালাক দিয়ে তাকে বিয়ে করার জন্য ফুসিলিয়ে আসছে। তিনি রাজি না হওয়ায় তাকে বিদ্যালয়ে ও তার স্বামীর বাড়িতে সময় অসময়ে গিয়ে যৌনহয়রানি করে আসছে।
ভূক্তভোগী শিক্ষিকা জানান,“আমি তার হয়রানি থেকে বাঁচার জন্য প্রথমে সহকর্মীদের ও পরবর্তীতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যদের জানালেও সভাপতি কোন ব্যবস্থা নেয়নি। যার ফলে প্রধান শিক্ষকের হয়রানি দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে।”
ভূক্তভোগী শিক্ষিকা ছাড়াও আয়েশা আক্তার নামের আরেক শিক্ষিকার সাথেও এই ধরনের অনৈতিক কাজের চেষ্টা করেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক। আয়েশা আক্তার জানান, “আমি যে কয় দিন চাকুরী করেছি প্রধান শিক্ষক মহিন উদ্দিন আমাকে কখনো শান্তি দেয় নাই। প্রতিনিয়ত আমাকে বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানীর চেষ্টা করত। বিষয় গুলো আমি বিদ্যালয়ের সভাপতিকে জানালেও তিনি কোন প্রতিকার বা ব্যবস্থা গ্রহণ করে নি।”
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ মহিউদ্দিন জানান, “শিক্ষিকার অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের নিয়মিত উপস্থিতি ও পাঠদানের জন্য কড়াকড়ি করায় একটি মহল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তিনি বিবাহিত তার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে।”
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু তালেব জানান, “ এ বিষয়ে আমি কোন কিছু জানি না। আমি পাঁচপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতির সাথে যোগাযোগ করে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ কবর।”
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য হাজী হোসেন আহাম্মদ, মোঃ কাউছার ও মাহবুবুর রহমান সেলিম এবং হারুনুর রশিদ জানান, আমরা অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে সভাপতিকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভা আহবান করার জন্য বললেও তিনি গত ৮ মাস ধরে কোন মিটিং করতে রাজি হননি। আজ মিটিং আহবান করলে আমরা মিটিংএ ব্যাপারটি তুলে ধরলে সভাপতি বিষয়টি এড়িয়ে যান। ফলে আমরা মিটিং বয়কট করি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুর রহমান বাবুর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, “অনেক আগে শিক্ষিকা আসমাউল হোসনা আমাকে ফোন করে অভিযোগ করছে। তিনি লিখিত অভিযোগ না করায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন প্রয়োজন হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিব।”
চন্দ্রগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত মফিজ উদ্দিন জানান, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করেছি। ভূক্তভোগী শিক্ষিকা লিখিত অভিযোগ করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
|