গুলিবিদ্ধ যার গুলিতে তার নামই নেই আসামির তালিকায়!
মো: ফয়জুল আলম
|
![]() নিউজ ডেস্কঃ নির্বাচনের দিন (৭ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী-খুলশি) আসনের এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কেন্দ্র দখলে নিতে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়েছিলেন ছাত্রলীগ কর্মী শামীম আজাদ ওরফে ব্লেড শামীম। সেই গুলিতে ‘ভুলে’ গুলিবিদ্ধ হন স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কেন্দ্র দখলে অংশ নেওয়া শান্ত বড়ুয়া। দুজনেই আবার স্থানীয় পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। সেই ওয়াসিমের নির্দেশেই শামীম গুলি করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু গুলিবিদ্ধ শান্ত বড়ুয়া তাকে গুলি করা শামীম আজাদ কিংবা নির্দেশদাতা ওয়াসিমের বিরুদ্ধে নয় মামলা করে বসেছেন প্রতিপক্ষ ওই আসন থেকে জয়ী হওয়া নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর স্ত্রী ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ার) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাং সালাউদ্দিনের আদালতে গুলিবিদ্ধ শান্ত বড়ুয়া মামলাটি করেন। মামলায় মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুর স্ত্রী জিন্নাত মহিউদ্দিনসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন গুলি করে হত্যার চেষ্টা, মারধর ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে করা এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খুলশী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মোহাম্মদ হোসেন, তার স্ত্রী মোছাম্মৎ কাজল, হোসেনের অনুসারী মাহমুদুর রহমান, কামাল ওরফে কাঁচি কামাল ও রাবেয়া মুন্নী। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গত রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন পাহাড়তলী কলেজ কেন্দ্র দখল নিতে শামীম আজাদ এলোপাতাড়ি গুলি ছোঁড়েন। নির্বাচনে স্থানীয় পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনজুর আলমের পক্ষে কাজ করেন। তিনিই তার অনুসারীদের কেন্দ্র দখলে নামিয়ে দেন বলে আলোচনা আছে। গুলি করে আলোচনায় আসা শামীম আজাদ এই কাউন্সিলের ‘ডান হাত’ বলে এলাকায় পরিচিত। এদিকে শান্ত বড়ুয়ার করা মামলার এজহারে বলা হয়েছে, বাদী নগরের এমইএস কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় আসামিরা বাদীকে প্রচারণা শুরুর পর থেকে হুমকি দিয়ে আসছেন। গত রোববার নির্বাচনের দিন বাদী নগরের খুলশী পাহাড়তলী ডিগ্রি কলেজ ভোটকেন্দ্রের চারশ গজ দূরে অবস্থান করছিলেন। ওই সময় নৌকার প্রার্থী মো. মহিউদ্দিনের নির্দেশে আসামি মোহাম্মদ হোসেন তার কোমরে থাকা পিস্তল দিয়ে গুলি করতে থাকেন। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী ও র্যাবের বক্তব্যের সঙ্গে মিলছে না শান্ত বড়ুয়ার এই দাবি। ঘটনার দুদিনের মাথায় গত সোমবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা এলাকা থেকে শামীমকে গ্রেফতার করে র্যাব-৭ চট্টগ্রামের একটি দল। তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। পরদিন মঙ্গলবার র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন নগরীর চান্দগাঁওয়ের র্যাব ক্যাম্পে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, শামীমের গুলিতেই শান্ত বড়ুয়া আহত হন। র্যাবের এই কর্মকর্তা সেদিন আরও বলেন, নির্বাচনের দিন শামীম পাহাড়তলী এলাকায় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্ন করতে অস্ত্রাধারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে কেন্দ্রের সামনে আধিপত্য বিস্তার, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা বা সহিংসতা ঘটান। তিনি ভোটকেন্দ্রের সামনে নিজে বিদেশি পিস্তল দিয়ে প্রতিপক্ষকে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করেন। তার গুলিতেই শান্ত এবং জামাল নামে দুই ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। এই বিষয়গুলো সামনে এনে মামলার আসামি ও মহিউদ্দিন বাচ্চুর অনুসারী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, গুলিবিদ্ধ শান্ত বড়ুয়া কাউন্সিলর ওয়াসিমের অনুসারী।গুলি করা শামীমও ওয়াসিমের রাজনীতি করেন। তারা এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কেন্দ্র দখল করতে ভাড়ায় এসেছিলেন। সবাই জানে শামীমের এলোপাতাড়ি গুলিতেই শান্ত বড়ুয়া আহত হয়েছেন। কিন্তু জড়িতদের বিরুদ্ধে নয়, মামলা করা হলো আমাদের বিরুদ্ধে। মামলায় আবার মহিউদ্দিন বাচ্চু ভাইয়ের স্ত্রী জিন্নাত মহিউদ্দিনকেও আসামি করা হয়েছে। অথচ এসবে তার কোনো সম্পৃক্ততাই নেই। মামলাটি পুরোটাই ষড়যন্ত্রমূলক। এ বিষয়ে সদ্য সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া মহিউদ্দিন বাচ্চু বার্তা২৪.কমকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এর মধ্যেই গুলি করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। পাশাপাশি কে গুলি করেছে সেটিও স্পষ্ট করেছে। সেজন্য আমি আশাবাদী অন্য কোনো ব্যক্তিকে অন্যায় বা মিথ্যাভাবে জড়ানোর চেষ্টা করে কেউ সফল হবে না। অভিযোগের বিষয়ে জানতে মামলার বাদী শান্ত বড়ুয়ার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। মামলা করার পর তিনি মোবাইল ফোন এড়িয়ে চলছেন বলে জানা গেছে। একই বিষয়ে পাহাড়তলী কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিনের বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। শান্ত বড়ুয়ার করা মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী তারিকুল ইসলাম। এর আগে, শামীম আজাদের গুলিতে আহত জামালের স্ত্রী হাজেরা বেগম বাদী হয়ে ঘটনার দিন রাতে খুলশী থানায় মামলা করেন। মামলায় শামীমকে ১ নম্বর আসামি করা হয়। বাকি ৬ আসামি হলেন পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, তার স্ত্রী রোমানা চৌধুরী, ওয়াসিমের অনুসারী কাজী কাউসার, মো. সুমন ও মো. পারভেজ। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয় এই মামলায়। সেই মামলার পাল্টা দিতে ওয়াসিম উদ্দিনের পরামর্শে শান্ত বড়ুয়া, মহিউদ্দিন বাচ্চুর স্ত্রী ও অনুসারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। |