সঠিক তাপমাত্রা মাপার কোনো উপায় নেই ঠাকুরগাঁওয়ে
মোঃ ফয়জুল আলম
|
নিউজ ডেস্কঃ ঠাকুরগাঁওয়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় লাগানো আলু কুয়াশায় নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু এলাকায় বোরো বীজতলাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে জেলার সড়ক-মহাসড়কে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও এবং পার্শ্ববর্তী জেলায় নিয়মিত রেকর্ড করা হচ্ছে। তবে ঠাকুরগাঁওয়ে বিএমডির কোনো কার্যালয় না থাকায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) কখনই সঠিক তাপমাত্রা নির্ধারণ করতে পারেনি। ফলস্বরূপ, হিমালয়ের এত কাছে অবস্থিত জেলাটি কখনই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় পড়েনি। জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলা ছাড়া বাকি চারটি উপজেলা ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী এবং কাঞ্চনজঙ্ঘার খুব কাছে। জেলার লোকজনের অভিযোগ, সেখানে মেট অফিস না থাকায় জনগণের দুর্ভোগ প্রায়ই মূলধারার মিডিয়ায় তুলে ধরা হয় না ফলে প্রকৃত চিত্র কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায় না। পঞ্চগড় দেশের সর্ব উত্তরের জেলা। প্রতি বছর শীতকালে জেলায় শীত ও কুয়াশার তীব্রতা বেশি থাকে। কিন্তু জেলায় প্রতিদিন তাপমাত্রা কত তা কেউ জানে না। স্থানীয় লোকজন বলছেন, শীতকালে জনদুর্ভোগ কমাতে সময়োপযোগী ব্যবস্থা নিতে জেলায় আবহাওয়া অফিস বা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থাকাও জরুরি। এ বছর শৈত্যপ্রবাহের বানান জেলার জনজীবনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। জীবনযাত্রা থমকে গেছে। রংপুর আবহাওয়া অফিস জানায়, রোববার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত পাঁচ মৌসুমে জেলায় এটাই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তবে আবহাওয়া অফিস না থাকায় সঠিক তাপমাত্রা নিয়ে সাংবাদিকসহ জেলার সবাই বিভ্রান্তিতে রয়েছেন। আবহাওয়া অফিস না থাকার কারণে গণমাধ্যমকর্মীরা সঠিক সংবাদ প্রচার করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। প্রতি মৌসুমে কুয়াশার কারণে অনেক কৃষকের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং এর কোনো প্রতিকার না হওয়ায় লোকসান হচ্ছে। প্রচণ্ড ঠান্ডায় গরু-মুরগিও মারা যাচ্ছে। গত মাসের শুরুতে শৈত্যপ্রবাহের সময় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলেও ঠাকুরগাঁওয়ে তারা এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা বোধ করে না। ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান মিঠু বলেন: “আমরা মাঝে মাঝে অনুভব করেছি যে এই জেলার মানুষ সবচেয়ে বিপর্যয়পূর্ণ শীতের সম্মুখীন হয়েছে কিন্তু আমরা আমাদের এলাকায় কখনই তা চিত্রিত করতে পারিনি। কারণ এখানে আবহাওয়া নেই। দপ্তর.” জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আকতার হোসেন বলেন: “তাপমাত্রার সঠিক সংখ্যা না থাকায় শীতকালে কখন স্কুল বন্ধ করব এবং কখন খোলা রাখব তা সিদ্ধান্ত নেওয়া আমাদের পক্ষে কঠিন। আমরা গত সপ্তাহে জেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছি কিন্তু এই সপ্তাহে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।” স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এই জেলার অধিকাংশ মানুষই কৃষির সঙ্গে জড়িত। আবহাওয়া অফিস থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া এবং তাদের ক্ষতি রোধ করা সম্ভব হবে।” সীমান্ত চৌকিতে নিয়োজিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কর্মীরাও শীতে দুর্ভোগে পড়েছেন। তারা সারা বছরই সীমান্ত ম্যানেজ করে এবং সেখানে সঠিক তাপমাত্রা কেউ জানে না। ৫০-বিজিবি ব্যাটালিয়নের ক্যাপ্টেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানজির আহমেদ বলেন, পোস্টে থাকা সৈন্যদের জন্য সঠিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যাতে তারা যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরও ভালোভাবে প্রস্তুত থাকে। জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমাদের খামার ও কৃষকদের রক্ষা করতে আবহাওয়ার সঠিক তথ্য জানতে হবে। আবহাওয়া জানা সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য এবং তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসন বুঝতে পেরেছে যে এই জেলায় একটি আবহাওয়া অফিসের জরুরি প্রয়োজন রয়েছে।” |