পটুয়াখালী পৌরসভায় আধুনিক নগরায়নের নামে ভয়ংকর দুর্নীতির অভিযোগ।
মু,হেলাল আহম্মেদ (রিপন)
|
পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালী পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে আধুনিক শহর নির্মানে গায়েবী টেন্ডারের মাধ্যমে অর্থ লুট, অতিরিক্ত দরে প্রাক্কলন তৈরী করে ২০-৩০% অর্থ আদায় এবং একই কাজে পৃথক প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ লোপাটসহ বিস্তর অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি এমন অভিযোগ এনে দূর্নীতি দমন কমিশনের( দুদক) প্রধান কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন পৌর এলাকার টাউন কালিকাপুরের বাসিন্দা মো. রেদোয়ান আহম্মেদ।
একই অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়,স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়, একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দেয়া হয়েছে।
দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, অভিযোগটি ঢালাও নয়, দূর্ণীতির সুনির্দিষ্ট তথ্যও রয়েছে। তবে এখন অনুমোদনের অপেক্ষায়। কমিশন অনুমোদন দিলেই মাঠে নামবে দূদকের অনুসন্ধানী টিম।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশে ও মেয়রের ব্যবসায়িক পাটনার মিজানুর রহমান স্বপন মৃধার বাড়ীর সংলগ্ন খালে দুইটি গার্ডার সেতু নির্মান হয়। পরে একই ব্রীজের নামে এলজিইডি থেকে পূনরায় টেন্ডার করে মেয়রের প্রতিষ্ঠান মেসার্স মহিউদ্দিনের নামে কার্যাদেশ নিয়ে ৪ কোটি লোপাট করেন।
এদিকে ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ পিপিআইডিপি/ডিআর ২০১৮-২০১৯/০৩ প্যাকেজে- একটি দরপত্র আহ্বান করেন এবং আইইউ আইডিপি-২/পটুয়া/পি-১০ প্যাকেজে-২০২০ সালে ১০ মে দরপত্র আহ্বান করেন। পৃথক দুটি প্যাকেজের কাজ অন্য প্রকল্প থেকে বাস্তবায়ন করে ১৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা লোপাট হয়।
২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পৌর এলাকার তিতাস সিনেমা হল থেকে রুস্তুম মৃধার কালভার্ট পর্যন্ত সচল সড়ক সংস্কারের দরপত্র আহ্বান করে পৌরসভা। এতে ব্যয় দেখানো হয় ১৬ কোটি টাকা। দুই মাসের মাথায় ২৪ নভেম্বর একই সড়ক সংস্কারের নামে দ্বিতীয় দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়। নির্ভরযোগ্য সুত্রমতে একই সড়কের নামে পৃথক ৪টি প্রকল্প দেখিয়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকা লোপাট করেন। ২০২১ সালের ২৪ জুলাই মেমো নং পটুয়া/পৌরস/ইঞ্জি/এডিপি/২০২১/
২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর পিপিআইডিপি/আরডি/২০১৯-২০২০/১২ এর আওতায় ডিসিরর বাসা সড়ক থেকে কলাতলা হয়ে যুব সংসদ হয়ে বাবরি মসজিদ হয়ে হেতালিয়া বাধঘাট পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের দরপত্র আহ্বান করে পৌরসভা। এর আগে পিপিআইডিপি/আরডি ২০১৮-২০১৯/১১-১ প্রকল্পের আওতায় একই বছরের ২৩ এপ্রিল একই সড়কে ইউনি ব্লক সংস্কার দেখিয়ে বরাদ্দ লোপাট করেন মেয়র। পরে দৃষ্টি নন্দন শহর গড়ার নামে নির্দিষ্ট সড়কে গাছ রোপন করে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়েছেন মেয়র।
পৌর এলাকার গরুর বাঁধ সংলগ্ন পুকুর, কলের পুকুর, জেলা কারাগার পুকুর, সরকারী কলেজ পুকুর এবং সার্কিট হাউজ সংলগ্ন পুকুর ডিসির বাসভন সংলগ্ন পুকুর গুলো এলজিইডি খনন করেন। অথচ ২০২১ সালের ২ মার্চ প্যাকেজ নং-পিপি আইডিপি/ডিইএইউ/২০১৯-২০২০/১৪ এবং পিপিআইডিপি/পিইএইউ/
২০২০-২০২১/১৫ প্যাকেজের আওতায় পৃথক দরপত্র আহ্বান করে ১৮ কোটি টাকা লোপাট করেন। ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর হাউজিংয়ে মেয়রের নিজস্ব বাসার যাতায়াত সুবিদা নিতে আইইউ,আইডিপি-২/পিএটি/পি ১৩ প্রকল্পের আওতায় ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সড়ক ও ড্রেন নির্মান করেন।
পৌরসভা মেয়র, র্নিবাহী প্রকৌশলীসহ মোট ৫টি সচল যানবাহন থাকলেও ভুয়া বিল ভাউচার করে রাজস্ব খাত থেকে আড়াই কোটি টাকা লোপাট করেন চালক মাসুদ ও সিদ্দিকুর রহমান। সবশেষে নিয়োগবিধি তোয়াক্কা না করে মো. সুমন হাওলাদারকে স্বাস্থ্য সহকারী, রাসেদুল হাসানকে সহকারী কর আদায়কারী এবং মো. দেলোয়ার হোসেনকে সহকারী কর নির্ধারক পদে নিয়োগ দেন মেয়র।
পটুয়াখালী এলজিইডি থেকে হাতিয়ে নেয়া প্রকল্প গুলোতে বিশেষ কৌশলে বাজার দরের থেকে দ্বিগুন মুল্য নির্ধারন করে একাধিক প্রকল্প বগিয়ে নেন মেয়র মহিউদ্দিন ও তার ঘনিষ্টবন্ধু হাফিজুর রহমান। ইতোপূর্বে মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ ও হাফিজুর রহমানের প্রোরচনায় টেন্ডার দুর্নীতি লিপ্ত হয়ে বিভাগীয় মামলার শিকার হয়েছে এলজিইডির তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার ও জিএম শাহাবুদ্দিনসহ একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বিগত ৫ বছর পৌরসভার সকল উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারী ছিলেন মেয়র মহিউদ্দিন তার বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ, মিজানুর রহমান স্বপন মৃধা, অভি সিকদার, বাপ্পি মিয়া ওরফে কচু বাপ্পি, কলাতলার জাহাঙ্গীরসহ মেয়রের কাছের লোকজন। বাস্তবায়িত প্রকল্পের নির্মান সামগ্রীও সরবরাহ করেন মেয়রের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান।
এছাড়াও দ্বিগুন দামে স্টোশনারী, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ সরবরাহ করতেন কাজী নাসরু তালুকদার, ফরহাদ জামান বাদল এবং মেয়রের কাছের লোকজন। অভিযোগ রয়েছে,পরিচ্ছন্ন কর্মীর ব্যবহৃত এপ্রোনের বাজার মুল্য ৩শ টাকা হলেও এপ্রোন প্রতি ৩ হাজার টাকা বিল করে গত ৫ বছরে কোটি টাকা হাতিয়েছেন মেয়র ও তার ঘনিষ্টরা। শহরের সকল সড়ক বাতি তিনগুন দামে সরবরাহ করেছেন মেয়রের বন্ধু জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান। পৌর এলাকার সকল পানির লাইন সংযোগ দিতেন হাফিজুর রহমানের বড় ভাই বাবু এবং পানির মিটার দিতেন কাজী নাসরু তালুকদার। গোটা ৫ বছরে পৌরসভার সকল কার্যক্রম ছিল মেয়রের বলয়ে। যে কারনে মহিউদ্দিন আহম্মেদ ক্ষমতায় বসে পৌরসভার তালিকাভুক্ত অন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের নবায়ন দেনননি।
অভিযোগে আরো বলা হয়, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সোনালী ব্যাংক চত্বরে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মানের জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়। তৎকালীন মেয়র ডাঃ শফিকুল ইসলাম ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী টেন্ডার নীতিমালা মেনে দুইটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিলে নিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ভাস্কর্য নির্মান কাজ শুরু করেন। ২০১৯ সালে মহিউদ্দিন আহম্মেদ মেয়রের চেয়ারে বসে পূর্বের ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল না করে মেয়রের ম্যান,দের দেয়া হয় বলে জানান।
|