ছিনতাইকারী থেকে ভয়ংকর খুনি: উত্তরায়!
|
সময় নিউজ বিডিঃ রাজধানীর উত্তরায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা দিন দিন আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে। প্রথমে ছোট ছোট অপরাধ করলেও পরে তারা বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের কেউ কেউ ছিনতাইকারী থেকে ভয়ংকর খুনি হয়ে উঠছে। চলতি বছরে উত্তরায় কিশোর গ্যাংয়ের হাতে দু’জন খুন হয়েছে। কিশোরদের অধিকাংশ স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী। গ্যাংয়ে ছিন্নমূল কিশোররাও রয়েছে। জানা গেছে, উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৩০টি কিশোর গ্যাংয়ের তিন শতাধিক সদস্য অপরাধে লিপ্ত। এলাকার কথিত বড় ভাইয়েরা গ্যাংগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাদের হাতেই প্রতিটি গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ। কিশোর বয়সে তাদেরও অপরাধের হাতেখড়ি হয়েছে। তাদের নামে উত্তরার বিভিন্ন থানায় খুন থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি, চুরি ও ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে হত্যা মামলাসহ ছয় থেকে ১২টি মামলা রয়েছে এমন বড় ভাইয়েরও খোঁজ পাওয়া গেছে। উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক সদস্যের কিশোর গ্যাং এবং কিশোর কিলার গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে ছাত্রলীগের নেতা দুই সহোদর। পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি মো. শহিদুল্লাহবলেন, কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা চালানোর কোনো সুযোগ নেই। এর আগে টিকটক অপুসহ বিভিন্ন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। যেসব কিশোরের বিরুদ্ধে গ্যাংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাদের অনেকে এখন এলাকাছাড়া। এসব গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ২৭ আগস্ট উত্তরখানে কিশোর গ্যাং ‘দি বস’-এর সদস্যরা কলেজছাত্র মো. সোহাগকে ছুরিকাঘাতে খুন করে। রিকশার পানি গায়ে ছিটে যাওয়ার ঘটনা কেন্দ্র করে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে তাকে খুন করা হয়। গ্রুপটি উত্তরার বিভিন্ন এলাকার ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ‘দি বস’-এর নেতৃত্ব দেয়া নাজমুল হুদা নাদিমের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে প্রথম মামলা হয়। এক বছরের ব্যবধানে তার বিরুদ্ধে উত্তরার বিভিন্ন থানায় ছয়টি মামলা হয়েছে। এমনকি পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগেও তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গ্রুপটির শতাধিক সদস্য উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ‘দি বস’ গ্রুপের লিডার নাদিম হলেও নিয়ন্ত্রণ করেন দুই বড় ভাই শফিকুল হাসান ওরফে সানি ও শাকিল হোসেন ওরফে ড্যান্সার শাকিল। দুই ভাইয়ের নামে উত্তরার বিভিন্ন থানায়, হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আটটি মামলা রয়েছে। সানি উত্তরা পূর্ব থানা ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ড্যান্সার শাকিল উত্তরা এলাকার মাদক কারবারের অন্যতম হোতা। ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন বলেন, সানিকে এরই মধ্যে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি এখন ছাত্রলীগের কেউ নন। উত্তরখানের খ্রিস্টানপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুর রহমান জানান, ‘দি বস’ গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে হৃদয় নামে একজন রয়েছে। তাকে সবাই বেপরোয়া হিসেবে চেনেন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠার পর পড়াশোনা বাদ দিয়ে সে ওয়ার্কশপে কাজ নেয়। এরপর নাদিমের নেতৃত্বে ১০-১২ কিশোর মিলে ‘দি বস’ গ্রুপ তৈরি করে। এর আগে হৃদয় উত্তরার ৮ নম্বর সেক্টর এলাকায় বসবাস করত। এ সময় থেকে সে মাদকের কারবারে জড়িয়ে পড়ে। এরপর উত্তরখানে নানাবাড়িতে চলে আসে। এদিকে উত্তরখানের বড়বাগ এলাকায় কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করেন বাহাউদ্দিন শাওন ওরফে গ্রিল শাওন। তার বিরুদ্ধে উত্তরার বিভিন্ন থানায় আটটি মামলা রয়েছে। বোর্ডবাজার এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে আক্তারুজ্জামান ছোটন। তার বিরুদ্ধে উত্তরার বিভিন্ন থানায় ১২টি মামলা রয়েছে। এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়- উত্তরা এলাকার ভয়ংকর কিশোর গ্যাংগুলোর মধ্যে দি বস ছাড়াও বিগ বস, পাওয়ার বয়েজ, ডিসকো বয়েজ, নাইন স্টার, নাইন এম এম বয়েজ, এনএনএস, এফএইচবি, জিইউ, ক্যাকরা, ডিএইচবি, ব্ল্যাক রোজ, রনো, কে নাইন, ফিফটিন গ্যাং, পোঁটলা বাবু, সুজন ফাইটার, আলতাফ জিরো, ক্যাসল বয়েজ, ভাইপার, তুফান, থ্রি গোল গ্যাং, শাহীন রিপন গ্যাং, নাজিম উদ্দিন গ্যাং, তালা চাবি গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। র্যাব-১ এর অধিনায়ক শাফীউল্লাহ বুলবুল বলেন, এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে সবসময় তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তাদের তৎপরতার খবর পেলে আমরা প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিশোর গ্যাং থেকে ভাসমান ছিনতাইকারী : উত্তরা ও আশপাশের এলাকায় ভাসমান ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িতদের একটা বড় অংশ একসময় কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্য ছিল। অনেকে আবার কিশোর গ্যাংয়ে যোগ দিয়েই ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে। ৯ ডিসেম্বর আবদুল্লাহপুরে এমন একটি গ্যাংয়ের হাতে ফেনীর কলেজছাত্র জিসান হাবিব খুন হন। এ গ্যাংয়ের ১১ সদস্যের মধ্যে ৯ জনকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, শুধু এ গ্রুপ নয় উত্তরা এলাকায় এমন একাধিক ভাসমান ছিনতাইকারী গ্রুপের সদস্য রয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের মাধ্যমে অপরাধ জগতে তাদের হাতেখড়ি হয়েছে। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, জিসান হাবিব খুনের ঘটনায় জড়িত ছিনতাইকারীরা উঠতি বয়সি। কিশোর গ্যাংয়ের মাধ্যমে তারা অপরাধ জগতে নাম লিখিয়েছে। এরই মধ্যে তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ গ্রুপের মতো আরেকটি গ্রুপকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরও শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে। |