টিউশনির টাকায় ভোটের মাঠে লক্ষ্মীপুরের ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের ইউছুফ
এস এম আওলাদ হোসেন, সিনিয়র রিপোর্টার।।
|
সময় নিউজ বিডিঃ নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তা আবু সালেহ মো. ইউছুফ। এক সময় গার্মেন্টসে অফিসিয়াল চাকরি করলেও এখন তিনি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে টিউশন করিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। বাড়তি কোনো উপার্জনও নেই। তবে তিনি মানুষের সেবা করার স্বপ্নে বিভোর। সেই লক্ষেই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে এক বছরের অগ্রিম টিউশন ফি নিয়ে ভোটের মাঠে নেমেছেন। এতে টাকা নয়, তার সবচেয়ে বড় পুঁজি জনগণ। গণসংযোগকালে গণমাধ্যম কর্মিদের ইউছুফ এমনই তথ্য দিয়েছেন।
এদিকে নির্বাচনী নিয়ম অনুযায়ী ভোট করার বৈধতা ও প্রতীক পেলেও ইউছুফ টাকাশূন্য। তার নেই কোন কর্মী। তবে কলেজ ও স্কুলপড়ুয়া তিন মেয়েই তার বিশ্বস্ত কর্মী। তিন মেয়েসহ একটি হ্যান্ড সাউন্ডবক্স নিয়ে তিনি মানুষের দরজায় গিয়ে ভোট চাচ্ছেন। দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। নির্বাচিত হলে প্রতি ছয় মাস পরপর একই দরজায় দেখা যাবে বলে ভোটারদের কাছে ওয়াদা করছেন। ভোটারদের কাছে তিনি সৎ ও কোমল হৃদয়ের মানুষ হিসেবেও পরিচিত।
ফুটবল প্রতীক নিয়ে ইউছুফ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) প্রার্থী। তিনি একই ওয়ার্ডের শরীফপুর গ্রামের মাওলানা আবুল বারাকাত সাহেবের বাড়ির বাসিন্দা।
অন্যদিকে বাবার পেছন পেছন সাউন্ডবক্স হাতে ফুটবল প্রতীকের প্রচারণায় তিন মেয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। বাবার সঙ্গে নুসরাত জাহান অন্তরা, ইফরাত জাহান স্মৃতি ও সানজিদা জাহান শোভা ভোটারদের কাছে ফুটবল প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন। বাবাকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করতে ছোট-বড় সকলের কাছে দোয়াও চাচ্ছেন তারা।
অন্য প্রার্থীরা পুরো নির্বাচনী এলাকায় পোস্টার-ফেস্টুন-প্লেকার্ড ছড়িয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু টাকার অভাবে ইউছুফ ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছেন। কোথাও তার কোনো পোস্টার-ফেস্টুন ও প্লেকার্ড নেই। ভোটাররা চাইলেও দিতে পারেন না। প্রচারণায় তার প্রধান সম্বল তিন মেয়ে। আর সাউন্ডবক্সে তার পক্ষে বাজানো গান। এছাড়া দৃশ্যমান আর কোনো প্রচারণার মাধ্যম নেই।
জানা গেছে, এইচএসএসি পাস ইউছুফ ঢাকার একটি গার্মেন্টসে অফিসিয়াল পদে চাকরি করতেন। ২০১১ সালে গার্মেন্টসটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি বাড়িতে চলে আসেন। স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসারের ঘানি টানতে ছোটখাটো একটি ব্যবসাও করেন। সেখানেও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। অবশেষে বাড়ির আশপাশে শিক্ষার্থীদের টিউশন করে সংসার চালাচ্ছেন। শধু সংসারই নয়, তিন মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিতও করছেন। তার বড় মেয়ে অন্তরা লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী ও মেঝ মেয়ে লক্ষ্মীপুর মহিলা কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। সংসারের হাল ধরতে ও পড়ালেখার খরচ চালাতে অন্তরাও এলাকায় টিউশন করেন।
কয়েকজন ভোটার জানান, ইউছুফ খুব ভালো মানুষ। সবার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। কখনও কারও ক্ষতি করেননি। সংসারে অভাব থাকলেও এলাকার বিপদগ্রস্তদের পাশে ছিলেন। আর্থিক সহযোগিতা সম্ভব হয়নি হয়তো, তবে শ্রম দিয়ে মানুষের উপকার করতে তিনি চেষ্টা করেন। তার মতো একজন ইউপি সদস্য পেলে এলাকার মানুষেরই উপকার হবে।
মেয়ে অন্তরা ও স্মৃতি বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি বাবা সততার সঙ্গে জীবনযাপন করে আসছেন। সব সময় নিজের সাধ্যমতো মানুষের উপকারে এগিয়ে এসেছেন। সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। জনপ্রতিনিধি হওয়া বাবার স্বপ্ন। আশা করি ভোটাররা তার স্বপ্ন পূরণে ফুটবল প্রতীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন।
স্ত্রী পারুল আক্তার বলেন, তিন মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসার। ইউছুফ নিজেও দীর্ঘ দিন অসুস্থ ছিলেন। প্রচুর টাকা খরচ হয়েছে তার সুস্থ্যতায়। অভাব থাকলেও এলাকার মানুষের উপকারে তিনি ছুটে যান। টাকা দিয়ে না পারলে শ্রম দিয়ে তিনি মানুষের উপকার করে আসছেন। সবাই তাকে ভোট দিয়ে স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের সেবা করার সুযোগ করে দিন।
আবু সালেহ মো. ইউছুফ বলেন, আমার কাছে টাকা নেই। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে এক বছরের অগ্রিম টিউশন ফি নিয়ে ভোটের মাঠে নেমেছি। টাকা না থাকায় আমার কোনো কর্মী নেই। তিন মেয়েকে নিয়েই আমি নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছি। মানুষের কাছে ভোট চাচ্ছি। টাকা সব নয়। আমার মূল পুঁজি জনগণ। তারা আমাকে ভোট দিলে আমি এলাকার উন্নয়ন করতে পারব। আমি নির্বাচিত হলে ভোটারদের দরজায় গিয়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালনের চেষ্টা করব। অতীতে কি করেছি সব ভুলে ভবিষ্যতটা জনগণের সেবা করে কাটাতে চাই। আশা করি, ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়ে সেই সুযোগ করে দেবেন।
উল্লেখ্য, চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে ২৬ ডিসেম্বর ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদসহ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ভোট হবে। এ ইউনিয়নের ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটাররা তাদের ভোটারাধিকার প্রয়োগ করবেন। ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ইউসুফের সঙ্গে বর্তমান ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান (মোরগ) ও নাজমুল হাসান পলাশ (তালা) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
|