কলাপাড়ায় দুটি কিডনি বিকল হওয়া শিক্ষিকা রাবেয়ার স্বামী শিক্ষক এখন দিনমজুর!!
সাইদুল ইসলাম তালুকদার কলাপাড়া
|
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলাধীন লালুয়া ইউপির প্রীতি হায়দার বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রাবেয়া আক্তার। স্বামী আফসার উদ্দিন একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তাদের আছে সাত বছর বয়সী একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান। স্বামী, সন্তান নিয়ে খুব সুখেই কাটছিলো রাবেয়ার সংসার। কিন্তু দু’টি কিডনি নষ্টের খবর জীবনের সব সুখ কেড়ে নেয় রাবেয়ার।
চিকিৎসা ব্যয় মিটাতে গিয়ে সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব এ পরিবারটি থাকছে এখন অন্যের বরাদ্দ পাওয়া আবাসনে। নিজের জন্য নয় শিশু সন্তানের জন্য সবসময় চিন্তা করেন তিনি। দু’চোখের চাহনিতে শুধু বেঁচে থাকার আশা। নিজের জন্য না হলেও দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়–য়া একমাত্র মেয়ে ফারিয়ার জন্য আরো কিছুদিন বাঁচতে চায় কিডনি রোগে আক্রান্ত রাবেয়া বেগম। সপ্তাহে দু’বার ডায়ালাইসিস করে এ পরিবারটি এখন নিঃস্ব প্রায়। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। যার ফলে এই শিক্ষক দম্পতির আয়ের পথ হটাৎ করে বন্ধ হয়ে গেছে। বে-সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও স্বামী আফসার উদ্দিন টিউশনি করিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যেই পরিবারের ভরনপোষণ করছিলেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কোন বাচ্চাকেই প্রাইভেট পড়াননা অবিভাবকগণ। রাবেয়া আক্তারের পিতা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, আমার বাড়ি লালুয়া ইউপির চৌধুরী পাড়া গ্রামে। সেখানে দশ লক্ষ টাকা ব্যায় করে আমি প্রীতি হায়দার বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলাম। যার উদ্দেশ্য ছিল আমার মেয়ে শিক্ষক হিসেবে চাকরি করতে পারবে। সেখানে আমার মেয়ে জামাই দুই জনই শিক্ষক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। নদী ভাঙ্গনের কারণে বিদ্যালয়টি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আমার মেয়ে জামাই বেকার হয়ে যায়। হটাৎ করে আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যাই। পরীক্ষা নিরিক্ষা শেষে জানতে পারি আমার মেয়ের দুটি কিডনি বিকল হয়ে গেছে। এদিকে পায়রা বন্দরের ভূমি অধিগ্রহণের ফলে আমার ভিটা মাটি সব নিয়ে যায়। অধিগ্রহণে পাওয়া প্রায় পঁচিশ লক্ষ টাকা মেয়ের চিকিৎসায় ব্যায় করেছি। এখন আমার কাছে আর নগদ কোন অর্থ নেই। এই অবস্থায় মেয়েকে সপ্তাহে দুইবার ডায়ালাইসিস করার মতো টাকা জোগাড় করা আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই কোন সহৃদয় ব্যাক্তি অথবা সরকার যদি আমার অসহায় পরিবারের দিকে তাকায় তবে মেয়েটা বেঁচে যেতো। লালুয়া বানাতি বাজারের ঔষধ ব্যাবসায়ী ফূর্তি তালুকদার জানান, এই পরিবারটি সম্পর্কে আমি জানি। আমার কাছ থেকে অনেক ঔষধ কিনেছেন। তারা একসময় এলাকায় ভালোই ছিলেন। রাবেয়ার অসুস্থতার কারণে আজ তারা নিঃস্ব। কিডনি রোগী রাবেয়া আক্তার কষ্ট করে কান্নাভেজা কন্ঠে এ প্রতিনিধিকে বলেন, নিজেদের চলনের মতো কোন ব্যবস্থা নাই। ডায়ালাইসিস করে আমার বেঁচে থাকা লাগে। সপ্তাহে দু’দিন ডায়ালাইসিস করা আমাদের পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না। বিয়ের পর আমার স্বামীকে পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ করে সৌদি আরব পাঠানো হয়েছিল। সমস্যার কারণে সেখান থেকে খালি হাতে চলে আসতে হয়েছে। এরপর দুই জন শিক্ষকতা করে ভালোই ছিলাম। কিন্তু আল্লাহ পাক আমার সে সুখ দীর্ঘস্থায়ী হতে দিলনা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসানাত মো.শহীদুল হক জানান, আপনার মাধ্যমে মেয়েটির অসুস্থতার কথা জেনেছি। এ ধরনের অসহায় মানুষের পাশে কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন সবসময় পাশে থেকেছে। রাবেয়ার ব্যাপারেও তার ব্যাতিক্রম হবেনা। নিজের জন্য নয়, সন্তানের জন্য আর কিছুদিন বেঁচে থাকতে চান রাবেয়া। রাবেয়াকে সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা। আফসার উদ্দিন, হিসাব নম্বর- ২০০১১২১০০০২৪৮০৭, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, খেপুপাড়া শাখা, পটুয়াখালী। অথবা বিকাশ নম্বর ০১৭৩৪-৭৭৩৪৯৪। |