জালিয়াতি করে কোটি টাকার জমি দখলের অভিযোগ।
ইসরাত জাহান কনিকাঃ- রাজশাহী।
|
সময় নিউজ বিডিঃ রাজশাহীর সপুরা এলাকায় প্রায় কোটি টাকা মূল্যের একটি জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী মহল এই দখলদারকে সহায়তা দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। জমির মালিক লাকী বেগম ও বায়না চুক্তিকারী আজগর হোসেন জমিটি দখলমুক্ত করতে রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন করেছেন। মেয়র ১৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুস সোবহানকে আহ্বায়ক করে একটি সালিশি কমিটি গঠন করে অভিযোগ নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন। ভুক্তভোগী লাকী বেগম ও আজগর হোসেনের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, রাজশাহীর হেতেখাঁ মহল্লার সাপিনা বেগম সপুরা এলাকার মূল্যবান পাঁচ কাঠা জমি ১৯৭৫ সালের ২২ এপ্রিল প্রকৃত মালিক শেখ হারুন ও শেখ নজিরের কাছ থেকে ক্রয় করেন। ক্রেতা সাপিনা বেগম জমি ক্রয়ের পর খারিজ শেষে নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে আসছিলেন। সাপিনা বেগম পরবর্তীতে তার নাতনি লাকী বেগমকে হেবা দলিল মূলে জমিটি হস্তান্তর করেন। এদিকে লাকী বেগম তার মালিকানার এই জমি আজগর হোসেনের কাছে বিক্রির জন্য বায়না চুক্তি সম্পাদন করেন। অন্যদিকে এই জমিটির মালিকানা পেতে নগরীর শিরোইল এলাকার জনৈক আব্দুল বারী, জমিটির ক্রেতা সাপিনা বেগমের টিপসই জাল করে বোয়ালিয়া থানার সহকারী ভূমি কমিশনারের আদালতে একটি অনাপত্তিপত্র (নাদাবিনামা) দাখিল করেন এই বলে যে, তিনি শেখ হারুন ও শেখ নজিরের কাছ থেকে জমিটি ক্রয় করেননি। ফলে বোয়ালিয়া সহকারী ভূমি কমিশনার শুনানি শেষে জমির মালিক সাপিনা বেগমের মালিকানা স্বত্ব বাতিল ও খারিজ বাতিল করে আদেশ দেন। অভিযোগে আরও জানা যায়, দখলদার আব্দুল বারী ভূমি কমিশনার আদালতের সার্ভেয়ার আবু সায়েমসহ কর্মচারীদের হাত করে গোপনে এই রায় হাসিল করেন। নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আব্দুর বারী একদিকে ক্রেতা সাপিনা বেগমের স্বাক্ষর ও টিপসই জালের মাধ্যমে নাদাবিনামা আদালতে দাখিল করে গোপনে রায় হাসিল করেন। অন্যদিকে জমিটির প্রকৃত মালিক শেখ হারুন ও শেখ নজিরের কাছ থেকে ২০০৬ সালের ৯ নভেম্বর কিনেছেন বলে একটি জাল দলিল তৈরি করে জমিটি জোরপূর্বক দখল করে নেন। আদালতের নথিপত্রে দেখা গেছে, নজির শেখের কাছ থেকে ২০০৬ সালে আব্দুল বারী জমি ক্রয় দেখালেও নজির শেখ ১৯৯২ সালের ১৪ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। অন্যদিকে কাগজপত্রের নকল তুলে সাপিনা পরে জানতে পারেন তার টিপসই জাল করেছে বারী গং। পাশাপাশি প্রকৃত মালিক শেখ নজির ও শেখ হারুনের কাছ থেকে কিনেছেন বলে একটি জাল দলিল করেছেন। ফলে সাপিনা বেগম জালিয়াতির বিরুদ্ধে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আদালতে একটি মামলা করেন। এতে আব্দুল বারী গং সাপিনা বেগমের স্বাক্ষর ও টিপসই জাল করেছেন বলে ফরেনসিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়। এছাড়া আব্দুল বারী যাদের কাছ থেকে জমিটি কিনেছেন বলে যে দলিল আদালতে পেশ করেন সেটিও জাল বলে প্রমাণিত হয়। ফলে এডিসি (রাজস্ব) সাপিনা বেগমের মালিকানার পক্ষে রায় দেন। টিপসই ও স্বাক্ষর জালের অভিযোগে আব্দুল বারী ও তাকে সহযোগিতাকারী ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আবু সায়েমের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের আদেশ দেয়া হয়। এই আদেশের পরও আব্দুল বারী জমির দখল ছাড়েননি। ফলে নানী সাপিনা বেগমের কাছ থেকে পাওয়া বর্তমান মালিক লাকী বেগম জমিটির দখল পাচ্ছেন না। লাকী বেগমের কাছ থেকে জমিটি কেনার জন্য বায়না চুক্তিকারী আজগর আলী বিপুল টাকা বিনিয়োগ করে এখন বিচারের আশায় ঘুরছেন। লাকী বেগমের অভিযোগ আব্দুল বারী ক্ষমতাসীন দলের কিছু লোককে হাত করে তার একমাত্র সম্বল জমিটি দখল করে রেখেছেন। তিনি বিচারের আশায় ঘুরছেন। রাসিক মেয়রের সালিশি কমিটির আহ্বায়ক ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল সোবহান বলেন, তারা দুই পক্ষকে নিয়ে একাধিকবার বসেছেন। সালিশি কমিটি দ্রুত এই বিষয়ে সুপারিশ ও সিদ্ধান্ত জানানো হবে। |