কৌশলে হচ্ছে বেচাকেনা ।
ইসরাত জাহান কনিকাঃ-
|
সময় নিউজ বিডিঃ করোনাভাইরাস ঠেকাতে সর্বাত্মক লকডাউনের চতুর্থ দিন শনিবার রাজশাহী ও ময়মনসিংহে নানা কৌশলে দোকানপাট খুলে বেচাকেনা করেছেন অনেকে। কোথাও অর্ধেক শাটার খুলে, কোথাও দোকানে তালা ঝুলিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে ক্রেতার অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। গেল তিন দিনের তুলনায় বিভিন্ন স্থানে লোকজন ও ছোট যানবাহন চলাচলও বাড়ে এদিন। অকারণে বাইরে বের হলে মামলা ও অর্থদণ্ড দিচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। খুলনায় চার দিনে ২২৬টি মামলায় ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এদিকে লকডাউনের কারণে লাগামহীনভাবে বাড়ছে সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এ যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। এজন্য সংশ্লিষ্টদের বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন অনেকে। রাজশাহী : শনিবার রাজশাহীতে লকডাউন ছিল কিছুটা ঢিলেঢালা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহানগরীর কাঁচাবাজারগুলোতে ভিড় বাড়তে থাকে। ভিড় ছিল টিসিবির পণ্য বিক্রয় পয়েন্টগুলোতেও। যেখানে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব তেমন চোখে পড়েনি। এছাড়া মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার ফলের দোকানগুলোতে ক্রেতা সমাগম ছিল বেশি। আরডিএ মার্কেট ও নিউমার্কেট বন্ধ থাকলেও বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কোর্ট এলাকায় অর্ধেক শাটার টেনে গার্মেন্টের দোকানগুলো খোলা রাখতে দেখা গেছে। তবে এসব দোকানে ক্রেতার উপস্থিতি ছিল হাতেগোনা। মহানগরীর প্রবেশপথগুলোতে প্রথম থেকেই কড়াকড়ি রয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মহানগরীর চারটি প্রবেশপথ দিয়ে কোনো পরিবহণ চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না। মহানগরীর মধ্যে সীমিত পরিসরে অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে গত তিন দিনের চেয়ে রাস্তায় অটোরিকশার পরিমাণ বেশি ছিল। মহানগরীর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে যাত্রী ও চালকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজনীয় কারণ দর্শাতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতেও দেখা গেছে। ময়মনসিংহ : লকডাউনে ময়মনসিংহ নগরীর সব শপিংমল ও বিপণিবিতান বন্ধ থাকলেও ভিন্নচিত্র নগরীর প্রাণকেন্দ্র সিকে ঘোষ রোড, রামবাবু রোড, স্বদেশী বাজার, ওল্ড পুলিশ ক্লাব রোড, স্টেশনরোড, নতুন বাজার ও চরপাড়া এলাকার বেশ কিছু দোকানের। এসব এলাকার বেশিরভাগ দোকানে তালা ঝুলিয়ে মালিক-কর্মচারীরা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকছেন, এরপর চোখের ইশারায় ক্রেতাকে ভেতরে ঢুকিয়ে বিক্রি শেষে আবার কলাপসিবল গেটে তালা ঝুলাচ্ছেন। এভাবে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সরেজমিন নগরীর স্বদেশী বাজার, সিকে ঘোষ রোড, রামবাবু রোড, ওল্ড পুলিশ ক্লাব রোড ও স্টেশন রোড ঘুরে দেখা যায়, দোকানের একটি শাটার খুলে চলছে বেচাকেনা। কোথাও অর্ধ শাটারের ভেতরে উপচে পড়া ক্রেতা। আবার কোথাও ক্রেতাকে ভেতরে ঢুকিয়ে শাটার ফেলে বিক্রি করতেও দেখা গেছে। এদিকে এবারের লকডাউনে নগরীর অধিকাংশ চায়ের দোকান বন্ধ থাকলেও পাড়া-মহল্লা, অলিগলি ও সড়কগুলোতে ওঠতি বয়সি ছেলেদের আড্ডা বা অহেতুক ঘোরাফেরা কমেনি। সিলেট : লকডাউনের কারণে লাগামহীনভাবে বাড়ছে সবজির দাম। শনিবার নগরীর বন্দরবাজার, সোবহানীঘাটসহ বেশ কিছু এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগের তুলনায় প্রায় প্রতি পণ্যে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা করে। এর মধ্যে বেগুন প্রতি কেজি ৩৫ টাকা করে পাইকারি ও ৪০-৫০ টাকা খুচরায় বিক্রি হচ্ছে। শসা প্রতি কেজি পাইকারি ৪০ টাকা এবং খুচরা ৫০-৫৫ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি কেজি পাইকারি ২৫ টাকা এবং খুচরা ৩০-৩৫ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি পাইকারি ৩৫ টাকা এবং খুচরা ৫০-৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি পাইকারি ৫০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৬০-৭০ টাকা, শিম প্রতি কেজি পাইকারি ৩৫ টাকা এবং খুচরা ৪৫-৫০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ১৫ টাকা পাইকারি এবং ২৫-৩০ টাকা খুচরা, সিসিন্দা প্রতি কেজি ২৫ টাকা পাইকারি এবং ৩০-৩৫ টাকা করে খুচরা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও গাজর, পটোল, আলু, বরবটিসহ প্রতিটি সবজির দামই বেড়েছে। বেড়েছে পেঁয়াজ, রসুন, শুকনা মরিচসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও। তবে বিক্রেতাদের দাবি- করোনাভাইরাসের কারণে বাজারে পর্যাপ্ত পণ্যের সরবরাহের অভাব এবং লকডাউন ও রমজানের কারণে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি হয়েছে। খুলনা : খুলনায় সরকারি প্রজ্ঞাপন না মেনে অনেকেই রাস্তায় বের হচ্ছেন। কেউ কেউ কোনো কারণ ছাড়াই প্রাইভেট কার নিয়ে ঘুরতে বের হচ্ছেন, কেউ ইজিবাইক নিয়ে বের হচ্ছেন, অনেকেই দোকান খুলছেন, মাস্ক পরলেও মানছেন না সামাজিক দূরত্ব। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে চেকপোস্ট বসানোসহ টহল জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও কাজ করছেন মাঠে। করা হচ্ছে মামলাসহ জরিমানা। ১৪ এপ্রিল খুলনায় ৮৫টি মামলা এবং ৫৪ হাজার ৫শ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ১৫ এপ্রিল ৮৭টি মামলা এবং জরিমানা করা হয় ৩৩ হাজার ৫শ টাকা। ১৬ এপ্রিল ৩৬ মামলায় জরিমানা আদায় হয়েছে ২২ হাজার ৯৫০ টাকা। শনিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত ১৮টি মামলায় সাড়ে ৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। |