সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দুই প্রবাসী শ্রমিকের স্বর্ণ পাচারের রেকর্ড
প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৯:১১ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

দুই প্রবাসী শ্রমিকের স্বর্ণ পাচারের রেকর্ড

সময় নিউজ বিডিঃ  স্বর্ণ চোরাকারবারে জড়িত দুই প্রবাসী শ্রমিকের হঠাৎ বিত্তশালী হয়ে ওঠার গল্প যেন কল্পকাহিনিকেও হার মানিয়েছে। হতদরিদ্র পরিচ্ছন্নতাকর্মী (সুইপার) থেকে রীতিমতো রাতারাতি ধনকুবের বনে যান তারা। অঢেল বিত্তবৈভবের নিচে এক সময় চাপা পড়ে তাদের আসল পরিচয়। চোরাচালানের টাকায় তারা দেশে-বিদেশে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়।চক্রের মূল হোতা সিঙ্গাপুরে স্থায়ীভাবে বসবাসরত দুই বাংলাদেশি। একজন আবুল হাসেম, অপরজনের নাম আলমগীর হোসেন। দুজনেই সিঙ্গাপুরে এক সময় সুইপারের কাজ করতেন। কিন্তু স্বর্ণ চোরাচালানের সুবাদে তাদের ভাগ্যের চাকা খুলতে বেশি সময় লাগেনি। তারা এখন হাজার কোটি টাকার মালিক।

 

সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে হাসেম আলমগীর চক্র সুকৌশলে ঢাকায় স্বর্ণের চালান পাচার করে আসছিলেন। কিন্তু গত বছর তাদের ৩২ কোটি টাকার একটি চালান ধরা পড়লে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। কাস্টমসের নথি খুঁজে দেখা যায় ইতোমধ্যে পাচার হয়েছে আরও ২শ চালান। স্বর্ণ আনতে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয় প্রায় হাজার কোটি টাকা। আরও কয়েকশ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় সরকার।

 

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাস্টমসের চোখ ফাঁকি দিয়ে একের পর এক স্বর্ণের চালান পাঠানো হলেও সংশ্লিষ্টরা অনেকটা হাত গুটিয়ে বসে থাকেন। কাচ এবং টাইলসের স্যাম্পলের কার্টনে পাঠানো হয় স্বর্ণের বার। কিন্তু একই স্যাম্পল বারবার এলেও রহস্যজনক কারণে কাস্টমস কর্মকর্তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি।

 

 

এ সংক্রান্ত মামলার তদন্তে চক্রের মোট ৯ সদস্যকে চিহ্নিত করে পুলিশ। এরা হলেন সিঙ্গাপুর প্রবাসী আবুল হাসেম, আলমগীর হোসেন ওরফে আজিজুল, সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলামিন ও জালাল আহম্মেদ, বিমানবন্দরের কার্গো লোডার জলিল মিয়া ওরফে জালাল, স্থপতি কাওসার আহাম্মেদ ওরফে বাপ্পী, জুয়েল রানা ওরফে সদর, আব্দুল লতিফ এবং ফরহাদুল ইসলাম ওরফে গোল্ডেন সুমন। এদের একেকজন চোরাচালানের কাজে একেক ধরনের দায়িত্ব পালন করে।

 

 

চোরাচালানের টাকায় হাসেম এবং আলমগীর দেশে-বিদেশে ব্যবসা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমিসহ অঢেল সম্পদ কিনেছেন। আছে সুপার শপ, টিকেটিং ও আদম ব্যবসা। এমনকি বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তারা সিঙ্গাপুরে নাগরিকত্ব পেতেও সক্ষম হয়েছেন।

 

 

ঢাকা ও কুমিল্লা ঘুরে হাসেমের নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের খোঁজ মেলে। শহরের পুলিশ লাইন রোডে ৯/এ সেল অর্কিড নামের কনডোমিনিয়ামে দেড় কোটি টাকার ফ্ল্যাট, দেবপুরে ৫ কোটি টাকার পেট্রল পাম্প (রাফিয়া ফিলিং স্টেশন) এবং নিশ্চিন্তপুর এলাকায় রয়েছে মোটরসাইকেল শোরুম। এছাড়া সিঙ্গাপুরের গ্যালাং এলাকায় কিনেছেন সুবিশাল সুপার স্টোর। তবে স্বর্ণের চালান ধরা পাড়ার পর হাসেম লাপাত্তা। তার সব ব্যবসা দেখভাল করছেন ভাইরা শাহজাহান এবং ভাতিজা ফরহাদুল ইসলাম ওরফে গোল্ডেন সুমন।

 

 

এছাড়া চোরাকারবারি আলমগীর নামে-বেনামে রাজধানীতে অন্তত ১০টি ফ্ল্যাট ও ৪টি বাড়ির মালিক। এর মধ্যে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর রোডের ৫০ নম্বর বাড়িতে একটি এবং দক্ষিণখান মধ্য ফায়দাবাদে আপন ভুবন বিল্ডিংয়ের ৪ তলায় তার আরেকটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পায় পুলিশ। ডেমরা সানারপাড় এলাকায় দুটি এবং গাজীপুরে তার দুটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়। ডগাইর পূর্বপাড়া এলাকায় গেলে স্থানীয়রা দুটি বাড়ি দেখিয়ে দেন, যেখানে আলমগীরের নিয়মিত যাতায়াত আছে। এর একটির হোল্ডিং নম্বর ২৮১/২৪।

 

ঢাকা এবং কুমিল্লায় তার একাধিক বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলেও গ্রামের বাড়িতে তেমন কিছুই নেই। মুরাদনগর উপজেলার দুর্গম খুরইল গ্রামে টিনের জরাজীর্ণ ঘরটি এখন প্রায় পরিত্যক্ত। তার আরও বাড়ি ও ফ্ল্যাটের খোঁজে পুলিশের অনুসন্ধান এখনও চলমান।

 

 

এছাড়া চক্রের অন্য সদস্যরাও রাতারাতি কোটিপতি বনে যান। চালান খালাসকারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আলামিন (ফিউচার ট্রেড ইন্টারন্যাাশানাল) পারিশ্রমিক পান লাখ টাকার ওপরে। আরেক সদস্য জালাল আহমেদ আগে দিনমজুর ছিলেন। কিন্তু চোরাচালানের টাকায় দক্ষিণখান সেলিম মার্কেটের কাছে দুই কোটি টাকায় বাড়ি কেনেন। এছাড়া কাওসার আহাম্মেদ ওরফে বাপ্পি নামের এক স্থপতি চোরাচালান চক্রের নাম লেখানোর পর বিলাসবহুল জীবনযাপন শুরু করেন।

 

 

তুরাগের আহালিয়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল লতিফকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। তিনি এখন কারাবন্দি। ৩ জানুয়ারি আহলিয়া এলাকায় গেলে স্থানীয়রা জানান, লতিফ স্থানীয়ভাবে সোনা চোরাকারবারি হিসাবে পরিচিত। গত কয়েক বছরে তিনি অঢেল টাকার মালিক বনে গেছেন। এলাকায় সম্প্রতি বেশকিছু মূল্যবান জমিও কিনেছেন তিনি।

 

 

বিমানবন্দর থানার ওসি বিএম ফরমান আলী  বলেন, বিমানবন্দরকেন্দ্রিক স্বর্ণের চালান অহরহ ধরা পড়লেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নেপথ্যের কারিগরদের গ্রেফতার করা যায় না। তবে এ মামলাটির ক্ষেত্রে জড়িত গডফাদারসহ পুরো চক্রটিকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি স্বর্ণ চোরাচালান মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে এটি একটি মডেল হিসাবে চিহ্নিন্ত হবে।

 

 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার ইন্সপেক্টর নূর মোহাম্মদ বলেন, ইতোমধ্যে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের সংশ্লিষ্টতা শতভাগ প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে। এখন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলেই একটি বড় চক্রের মূল উৎপাটন ঘটবে।

 

 

ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন  বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালান শূন্যে নামিয়ে আনতে কাজ করছি। কোনোভাবেই চোরাকারবারিদের ছাড় দেওয়া হবে না।এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাস্টম হাউজের কেউ যদি চোরাকারবারে জড়িত থাকে তবে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।

 

 

বক্তব্য : এ চক্রের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে ৩ জন গ্রেফতার হয়ে জেলে আছেন। একজন মারা গেছেন। বাকিরা পলাতক। ফলে অভিযোগ প্রসঙ্গে একজন ছাড়া পলাতক কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত আবুল হাসেম মোবাইল ফোনে ২১ জানুয়ারি বলেন, চোরাচালানের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকার একাধিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে তার কথা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

 

 

এদিকে সূত্র জানায়, স্বর্ণ চোরাকারবারি আলমগীর পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে কখনো কুমিল্লা আবার কখনো ঢাকায় আত্মগোপনে থাকছেন। গ্রামের বাড়িতে গেলে তার ভাতিজা হারুণ মেম্বার  বলেন, আলমগীর দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গাপুরেই বসবাস করেন। কিছুদিন আগে তিনি দেশে ফেরেন। তিনি স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত কিনা তা আমাদের জানা নেই।

Share Button




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

This image has an empty alt attribute; its file name is add-1-1024x672.jpg

সর্বাধিক পঠিত

  • প্রধান উপদেষ্টাঃ শাহজাদা পারভেজ টিনু।
    আইন উপদেষ্টাঃ এ্যাড আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ
    (জজকোর্ড ঢাকা)
    সম্পাদক ও প্রকাশক: এইচ এম মোহিবুল্লাহ (মোহিব)
    নির্বাহী সম্পাদকঃ মো: মোস্তাফিজুর রহমান।
    ব্যবস্থাপনা পরিচালক: নূর-ই আলম আজাদ।
    যুগ্ন সম্পাদকঃ আমিনুর রহমান রুবেল ও এস এম আমিনুল ইসলাম।
    সাহিত্য সম্পাদকঃ খলিলুর রহমান তাং ও ইউসুফ আলী তাং।
    বার্তা সম্পাদক : এস এম আওলাদ হোসেন।

অফিসঃ
ঢাকাঃ সুলতান টাওয়ার (৩য় তলা) টংঙ্গী বাজার, গাজিপুর, ঢাকা।
বরিশালঃ ৩৪৫ সিটি প্লাজা ৩য় তলা ,ফজলুল হক এভিনিউ বরিশাল।
কলাপাড়াঃ মমতা মার্কেট,বাদুড় তলী সূইজগেট,কলাপাড়া,পটুয়াখালী।
E-mail: somoynewskp@gmail.com
মোবাইলঃ 01721987722

Design & Developed by
  পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে সুন্দরবনের আগুন : ফায়ার সর্ভিস   তিন জেলায় বজ্রপাতে চারজনের মৃত্যু   নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে ৫ বাংলাদেশী আহত   নবনির্মিত এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী   লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হলেন সাদিক খান   আইওএম মহাপরিচালক ঢাকায় আসছেন আজ   বজ্রপাতে খাগড়াছড়িতে মা-ছেলের মৃত্যু   আবারও বাংলাদেশে ঢুকল বিজিপির অন্তত ৪০ সদস্য   চন্দ্রগঞ্জে ট্রাক সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত -৩   দুর্যোগ মন্ত্রনালয় বিশ্বে এখন রোল মডেল।…দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রী মহিববুর রহমান/   ইন্দোনেশিয়ায় বন্যা ও ভূমিধস : নিহত ১৫   পুলিশের মধ্যস্থতায় সমঝোতা: বনানীর সড়ক ছাড়লেন শ্রমিকরা   মুন্সীগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনা: একই পরিবারের ৩ জন নিহত   ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে   নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে কানাডায় ৩ ভারতীয় গ্রেপ্তার   বনানীতে পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ   রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির আশা বাংলাদেশ ও গাম্বিয়ার   সড়ক দুর্ঘটনায় মুন্সিগঞ্জে একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু   পটুয়াখালীতে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম দিবস পালিত ৷   কলাপাড়ায় প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পথচারীদের মাঝে বিনামূল্যে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ।