৭ রকমের অপরাধ, সাড়ে ৬ কিলোমিটারে
|
সময় নিউজ বিডিঃ- চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বর থেকে বহদ্দারহাট। সাড়ে ছয় কিলোমিটার এ সড়কে অন্তত ৭ ধরনের অপরাধ ঘটছে। সবচেয়ে বেশি অপরাধপ্রবণ এলাকা হচ্ছে শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বর। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এ প্রবেশমুখ ঘিরে রয়েছে এগারোটি বাস কাউন্টার, নিউমার্কেট, দেওয়ানহাট ও বহদ্দারহাটমুখী তিনটি টেম্পো (মাহিন্দ্র) স্ট্যান্ড, দুটি অস্থায়ী বাস স্ট্যান্ড, ফুটপাত আর সড়কজুড়ে ভাসমান হকার, ছিনতাই ও অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। ফুটপাত দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে টেম্পো স্ট্যান্ড। সড়কের সার্ভিস লেন দখল করে নানা ধরনের যানবাহন পার্কিং, সড়কের পাশে খাস জমি দখল করে দোকান নির্মাণ। বহদ্দারহাটে অবৈধ মাইক্রোস্ট্যান্ড, সিএনজিচালিত ট্যাক্সি স্ট্যান্ড। যানজট আর জনজটের গোলচত্বর ঘিরে রয়েছে পকেটমার, ছিনতাইকারি। বিশেষ করে পাশেই থাকা ক্ষেতচরের বাস্তুহারা কলোনিতে থাকা অপরাধীদের বিচরণ এ চত্বরকে ঘিরে। গত দু’দিন ধরে (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) সরেজমিন পরিদর্শনে নানামাত্রিক অপরাধের এ চিত্র উঠে আসে। নগর ট্রাফিকের দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার নাসির উদ্দিন জানান, বাস কিংবা ট্যাক্সি স্ট্যান্ড আমরা অনুমোদন দিইনি। এসব অনুমোদন দিতে আলাদা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গোলচত্বরে বিভিন্ন যানবাহনের স্ট্যান্ড অনুমোদন দেয়া আমাদের কাজ নয়। যানজটমুক্ত সড়কে নিরাপদে যানবাহন চলার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়া আমাদের কাজ। তারপরও জানজট সৃষ্টির বিষয়টি আমরা দেখবো। পর্যটন নগরী কক্সবাজার, বান্দরবান ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের নগরীর প্রধান প্রবেশমুখটি যেন নানা ধরনের ছোট বড় যানবাহন আর হকারদরে দখলে চলে যাচ্ছে। এ যেন অঘোষিত মিনি বাস স্ট্যান্ড। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, গোলচত্বর ঘিরে চলছে দখল-বেদখলের প্রতিযোগিতা। কক্সবাজার, বান্দরবান ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাত উপজেলা থেকে নানা কাজে নগরীতে আসা অধিকাংশ লোক গোলচত্বর এলাকায় নেমে ফিরিংঙ্গি বাজার কিংবা চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ হয়ে নগরীতে প্রবেশ করে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতকে কেন্দ্র করে গোলচত্বর জুড়ে গড়ে উঠেছে এগারোটি বাস কাউন্টার, ফুটপাত আর সড়ক দখল করে আগ্রাবাদ দেওয়ানহাট, নিউ মার্কেট ও বহদ্দারহাটমুখী টেম্পো (মাহিন্দ্রা) স্ট্যান্ড। গোলচত্বর পুলিশ বক্সের পেছনে, চাকতাইমুখী সড়কের মুখ ও উত্তর পশ্চিম পাশের ফুটপাত দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে তিনটি টেম্পো স্ট্যান্ড। চত্বরের ফিরিংঙ্গি বাজারমুখী সড়কের মুখ জুড়ে গড়ে উঠেছে পটিয়া শান্তিরহাটমুখী মিনিবাস স্ট্যান্ড। পূর্বপাশে রয়েছে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ামুখী মিনি বাস স্ট্যান্ড। রয়েছে দূর পাল্লার বাসের এগারোটি টিকেট কাউন্টার। বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে আসা কক্সবাজারগামী বাসগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে কাউন্টার ঘিরে। যানবাহনের অবৈধ স্ট্যান্ড দখল-বেদখলে সীমাবদ্ধ নয় শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বর এলাকা। চত্বরকে ঘিরে হাজারের অধিক হকারের ব্যবসা-বাণিজ্য। সেখানে সরকারি জমি দখল করে তৈরি করা হয়েছে বাস কাউন্টার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, সড়ক ও ফুটপাত দখল করে রেখেছে এক হাজারের বেশি ভাসমান হকার। অবৈধ যানবাহন স্ট্যান্ড ও হকারদের কাছ থেকে দৈনিক চাঁদা তোলা হয়। যেমন-প্রতিটি টেম্পো (মাহিন্দ্রা) থেকে লাইন খরচের নামে দৈনিক ২৫০ টাকা, প্রতিটি হকার ভ্যান থেকে দৈনিক ৫০ টাকা। তিনটি রুটে প্রতিদিন প্রায় ৩ শতাধিক টেম্পো চলাচল করে। সেই হিসাবে দৈনিক ৭৫ হাজার করে মাসে ২২ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়। চাক্তাই পুলিশ ফাঁড়ির নামে কামাল ও হারুন চাঁদা তুলেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।এর বাইরেও রয়েছে দখল-বেদখলের চাঁদাবাজি। তবে চাক্তাই ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই কারিমুজ্জামান জানান, হারুন কিংবা কামাল নামে কাউকে তিনি চিনেন না। মাঝে মাঝে ভাসমান হকার উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়। ফের কয়দিন পর তারা আবার বসে। সড়ক আর ফুটপাত দখল করে বসা ভাসমান হকারের ভ্যান আর চৌকিগুলো সন্ধ্যা হলে বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত হয়। বিদ্যুতের উৎস খুঁজতে গিয়ে জানা গেলো চমকপ্রদ তথ্য। বেশ কয়েকজন হকার জানান, মাগরিবের পর থেকে বাল্ব জ্বলে উঠে। একটি বাল্ব দৈনিক ১৫ টাকা করে ভাড়া দিতে হয়। মাসে প্রায় দেড় লাখ টাকা বাল্ব থেকে চাঁদা উঠে। কামালের সাথে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনের সখ্যতা রয়েছে। তারাও এসব টাকার ভাগ পায়। জানতে চাইলে বিদ্যুতের বিক্রয়-বিতরণ (বাকলিয়া) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম জানান, বাল্ব প্রতি টাকা তোলার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে সেখানে কিছু হকারকে অস্থায়ী মিটার দেয়া হয়েছে আবার কিছু হকার অন্য জনের কাছ থেকে সংযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। গোলচত্বর থেকে বহদ্দারহাটের দিকে চলে গেছে চারলেনের সড়ক। সড়ক বেয়ে কয়েক কদম সামনে গেলে দেখা যাবে জেলা প্রশাসনের একটি সাইনবোর্ড। যেখানে লিখা রয়েছে এ সম্পত্তি জেলা প্রশাসনের। সাইনবোর্ডে সরকারি জমি দখলের বিষয়ে বিধি নিষেধ থাকলেও পাশেই গড়ে উঠেছে ৮/১০টি দোকানের একটি মিনি মার্কেট। এ যেন বিধি নিষেধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি। কথা ছিলো চারলেন সড়কের সার্ভিস লেনে নন ভ্যাহিকেল যানবাহন যেমন, বাইসাইকেল, রিকশা কিংবা ছোট খাটো যানবাহন চলাচল করবে। কিন্তু কালামিয়া বাজার, রাহাত্তারপুল, এক কিলোমিটারসহ পুরো সড়কের সার্ভিস লেনে কোথাও বাস, কোথাও ট্রাক আবার কোথাও মিনি ট্রাক, কাভার্ডভ্যান পার্কিং করে রাখা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, দিনের পর দিন এসব যানবাহন সেখানে পার্কিং করে রাখা হয়। এক কিলোমিটার পার হয়ে বহদ্দারহাট বাস স্ট্যান্ডের দিকে মোড় নিতেই খাজা রোডে চোখে পড়বে বেশ কিছু গ্রাম ট্যাক্সি। এসব ট্যাক্সি কিন্তু নগরীতে প্রবেশ করার কথা নয়। খাজা রোডের মুখ থেকে অভ্যন্তরীণ সড়কে এসব ট্যাক্সি চলাচল করে বলে জানায় স্থানীয় লোকজন। মোড় পেরিয়ে বহদ্দারহাট মদিনা হোটেলের সামনে যেতেই চোখে পড়বে অবৈধ মাইক্রো স্ট্যান্ড। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া পর্যন্ত এসব মাইক্রোবাস চলাচল করে। পূর্ব ষোল শহরের জনৈক ইয়াকুব এসব মাইক্রো থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করেন। |